বেদ-পুরাণে তুলসী এবং অশ্বত্থ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বিষ্ণুর প্রভাব হিন্দুর জীবনে অত্যন্ত ব্যাপক। প্রস্তর থেকে বৃক্ষ-তরুও দেবত্ব লাভ করে সেই প্রভাবে। শালগ্রাম শিলার পাশাপাশি তুলসী এবং অশ্বত্থ নারায়ণের স্বরূপ হিসেবে পূজিত হয় ঘরে ঘরে।

তুলসী বৃক্ষ ‘হরিবৃক্ষ’ নামে প্রসিদ্ধ। এই প্রসঙ্গের উল্লেখ আছে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের এক উপাখ্যানে। কৃষ্ণপ্রিয়া শঙ্খচূড়পত্নী তুলসীর কেশ থেকে তুলসী বৃক্ষের জন্ম। শালগ্রামরূপী বিষ্ণুর পূজায় তুলসীপত্র অপরিহার্য।গোলোক বৃন্দাবনে গোপিকা বৃন্দাদেবীরূপে তুলসী রাধাকৃষ্ণের নিত্য সেবিকা এবং তাদের বিচিত্র দিব্য লীলা সম্পাদনের মূল পরিচালিকা।তিনি শ্রীকৃষ্ণের দূতী, কুঞ্জাদি সংস্কারে অভিজ্ঞা ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে পন্ডিত। তিনি সমস্ত দেবীগণের মধ্যে পবিত্ররূপা এবং সমুদয় বিশ্বের মধ্যে তাঁর তুলনা নেই বলে তিনি তুলসী নামে কীর্তিতা।

অশ্বত্থ বৃক্ষও নারায়ণ নামে পূজিত হয়ে থাকে। অশ্বত্থ গাছে জলসেচন পুণ্যকর্মরূপে বিবেচিত হয়। উপনিষদ বলছে,

ঊর্ধ্বমূলোহ বাকশাখ এষোহশ্বত্থঃ সনাতনঃ।

তদেব শুক্রঙ্গ তদব্রহ্ম তদেবামৃতমুচ্যতে।

তস্মিল্লোঁকাঃ শ্রিতা সর্বে তদু নাত্যেতি কশ্চন এতদ।

অর্থাৎ মূল এবং নিম্নে শাখা এই সনাতন অশ্বত্থ বৃক্ষ। তিনিই শুক্র, তিনিই ব্রহ্মা, তাঁকেই অমৃত বলা হয়। তাঁতেই সকল লোকের অবস্থান, কেউ তাঁকে অতিক্রম করতে পারে না। ইনিই তিনি।

ভগবদগীতাতেও এই অশ্বত্থের উল্লেখ আছে।

ঊর্ধ্বমূলোহ অধঃশাখ অশ্বত্থকে অব্যয় (ব্রহ্ম) বলা হয়, বেদ সকল তাঁর পাতা। তাঁকে যিনি জানেন তিনি বেদবিৎ। অশ্বত্থকে ব্রহ্মের সঙে উপমিত করা হয়েছে সেই জন্যই নারায়ণ বৃক্ষ বলা হয়।

ঋগ্বেদে একটি বৃক্ষে যমদেব অন্যান্য দেবতার সঙ্গে বাস করে, সেটিও অশ্বত্থই। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস, এই গাছের সব অংশে ভগবানের অধিষ্ঠান। অশ্বত্থ গাছকে চৈতী বৃক্ষ, বিশ্ববৃক্ষ ও বাসুদেবও বলা হয়ে থাকে।

শ্রীমদভগবত গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, গাছেদের মধ্যে আমি অশ্বত্থ। অশ্বত্থ গাছের মূলে ভগবান ব্রহ্মা, কাণ্ড অংশে ভগবান বিষ্ণু, এই গাছের ঊর্ধাংশে ভগবান শিবের বাস।

আবার স্কন্দ পুরাণ অনুসারে, অশ্বত্থ গাছের গোড়ায় ভগবান বিষ্ণু কাণ্ড বা মাঝের অংশে  কেশব, শাখায় নারায়ণ ,পাতায় ভগবান শ্রীহরি, এবং সমস্ত ফলের মধ্যে সমস্ত দেবতাদের অধিষ্ঠান। অথর্ববেদ এবং ছান্দোগ্যোপনিষদে অশ্বত্থ গাছের নিম্নস্থলকে দেবতাদের স্বর্গ বলা হয়েছে।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...