অনেক অনুভূতির মিশ্রণে তৈরি হয় এক কাপ কফি

কাপে ভাসছে হালকা ঘিয়ে রঙের তরল। উষ্ণ। ধোঁয়া উঠছে। কখনো বা শীতল। চারধারে লেগে রয়েছে বুদবুদের আকারে বিন্দু বিন্দু অনুভূতি। কফি। এক কাপ কফি কত রকম অনুভূতির গুপ্ত কোটরের দরজা খুলে দেয়, তার বোধহয় কোন হিসেব হয় না। কফি মানেই নস্ট্যালজিয়া। কফি মানেই ম্যাজিক। কফি-প্রেমীদের কাছে এই তরল যেন কোন জাদুবাস্তবের অমৃত। ‌যার ছোঁয়ায় শরীর, মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানও এমন কথাই বলে। কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীর, মন দুইই ভাল রাখে। ব্যতিক্রম উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা বা ইনসমনিয়া। ইনসমনিয়া অর্থাৎ অনিদ্রার সমস্যা থাকলে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কফি পান করা যায়, এমনটাই বলেন ডাক্তাররা। উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগতে থাকা মানুষদেরও নিয়মিত কফি পানের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তবে সমস্ত নিয়ম, ছকে বাঁধা পরামর্শদের গণ্ডিকে এক লহমায় ভেঙে ফেলার ক্ষমতা আছে এই ম্যাজিক তরলটির। কিন্তু আপনার, আমার হাতে এক কাপ কফি পৌঁছে দেওয়ার জন্য যাঁরা রোজ লড়াই করছে তাঁদের জীবন কিন্তু আদৌ কফির মতো সুস্বাদু হয় না। বরং ব্ল্যাক কফির মত তিক্ততায় ভরা থাকে। ২০১৪ সাল থেকে কফি উৎপাদন ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষদের জীবন, জীবিকাকে সম্মান জানানোর জন্য শুরু হয় আন্তর্জাতিক কফি দিবস পালন। প্রতি বছর ১লা অক্টোবর।

ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশনের ৭৭টি সদস্য দেশ মিলিতভাবে ২০১৪ সালে সিদ্ধান্ত নেয় আন্তর্জাতিক কফি দিবস পালনের। এই প্রত্যেকটি দেশই নির্দিষ্ট দিনে জাতীয় কফি দিবস পালন করত। কফি দিবস কফি উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকা হাজার হাজার শ্রমিকের দিন। আর সেই উৎপাদিত কফি তরল-নস্ট্যালজিয়ার আকারে আমাদের কাছে পৌছানো পর্যন্ত পথে অনেক মানুষের অন্নসংস্থান করে। এই দিন তাঁদেরও। আর যাঁদের কাছে প্যাশন শব্দের আরেক অর্থ কফি তাঁদেরও দিন। তবে মহামারীর থাবায় বিপর্যস্ত কফি ব্যবসা ও তার সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষের জীবন। এমনকি দাম বেড়েছে কফির। ফলে ধোঁয়া ওঠা কাপের উষ্ণতার আঁচ লাগছে পকেটেও। এ বছর আন্তর্জাতিক কফি দিবসের থিম 'কফির পরবর্তী প্রজন্ম'। ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশন এ বিষয়ে পয়লা অক্টোবর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কফি ব্যবসায় প্রযুক্তির ব্যবহার, তার সীমাবদ্ধতা ও আধুনিকীকরণ ঠিক কতটা প্রভাব ফেলছে সে নিয়েও আলোচনা হবে।

প্যাশনের অপর নাম কফি। সাধারণত কফি চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষরা পারিবারিক সূত্রে এই কাজ করে থাকেন। দক্ষতা ও সূক্ষ্মতা এই ক্ষেত্রে অন্যতম প্রয়োজনীয় গুণ। এই বিষয়কে উৎসাহ দেওয়া হয় কফি দিবস পালনের মাধ্যমে। সমগ্র পৃথিবীতে ব্রাজিলে সর্বাধিক কফি উৎপাদিত হয়। ভারতে কর্ণাটক সবচেয়ে বেশি কফি উৎপাদন করে। সারা বছরই মোটামুটি কফির চাহিদা থাকে। তবে শীতকালে সে চাহিদা বাড়ে। কফি মানেই একটুকরো আকাঙ্ক্ষার জগত। জীবনের পাওয়া না পাওয়া গল্পগুলো ঘিরে থাকে কফির স্মৃতি। এই পানীয়টি চুম্বকের মত আকর্ষণ করে সমস্ত বয়সের মানুষদের। শুধু কফির কাপের গল্পগুলো পাল্টে যায় বয়স অনুযায়ী, কখনো পরিস্থিতি অনুযায়ী, কোথাও আবার রেস্টুরেন্ট ভেদে। জনপ্রিয়তার নিরিখেও কফির জন্য সুনির্দিষ্ট রেস্তোরাঁগুলো বেশ এগিয়ে । কফির কাপ যে জীবনের কত জয়-পরাজয়ের বিশ্বস্ত সঙ্গী, তা শুধু সেই কাপগুলোই জানে। যন্ত্রণাক্লিষ্ট মনের সঙ্গী ধোঁয়া ওঠা এক কাপ কফি। আনন্দের মুহূর্তে ও এক কাপ কফি হয়ে ওঠে উদযাপনের আধার। কত সম্পর্কের শীতলতা কেটে যায় কোল্ড কফির ছোঁয়ায়। আমরা মুহূর্তের কাছে ঋণী থাকি সবসময়ই। নানা অনুভূতি মেশানো সেই সকল মুহূর্তরা গল্প করে এই তরল উষ্ণ বা শীতল পানীয়ের সঙ্গে। যার নাম কফি।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...