বঙ্গভূমির শক্তিপীঠঃ মহাশক্তিপীঠ বক্রেশ্বর

যুগ যুগ ধরে মানুষ বিশ্বাস করে এসেছে যে শক্তিপীঠরূপী তীর্থগুলিতে দেবী দাক্ষায়ণী সতীর দেহের নানান অঙ্গ প্রস্তরীভূত অবস্থায় রক্ষিত আছে। স্বয়ং মহাশক্তি মহামায়া বিরাজ করেন এই শক্তিপীঠগুলিতে। সাধারণত ৫১টি শক্তিপীঠের কথা বলা হয়ে থাকলেও, কোনও কোনও গ্ৰন্থে পীঠের সংখ্যা এর থেকে বেশী। পীঠনির্ণয় তন্ত্র গ্রন্থে লিখিত তথ্য অনুযায়ী শক্তিপীঠের সংখ্যা ৫১। এই একান্ন পীঠের তেরোটি পীঠের অবস্থান এই বঙ্গভূমিতে। তার মধ্যে বীরভূম জেলায় পাঁচটি সতীপীঠ অবস্থিত। এই সতীপীঠগুলির অন্যতম পীঠ হলো বক্রেশ্বর সতীপীঠ।

 

Bakreshwar1

 

বীরভূম জেলার পাপহরা নদীর তীরে অবস্থিত বক্রেশ্বর শক্তিপীঠ। বীরভূম জেলার সদর শহর সিউড়ি থেকে এই তীর্থের দূরত্ব ২৪ কিমি। বক্রেশ্বর শৈবতীর্থ হিসেবে প্রসিদ্ধ হলেও সতীপীঠ হিসেবেও এর খ্যাতি কম নয়। এখানে দেবী মহিষমর্দিনী। পৌরাণিক উপাখ্যান অনুযায়ী এখানে দেবীর ‘মন’ অর্থাৎ দেবীর ‘দুই ভ্রুর মধ্যবর্তী’ অংশ পতিত হয়েছিল। পীঠমালামহাতন্ত্র' শাস্ত্রে লেখা আছে- বক্রেশ্বর মনঃ পাতু দেবী মহিষমর্দিনী/ভৈরব বক্রনাথস্তু নদী তত্র পাপহরা। পীঠস্থানে দেবীর দশভূজা পিতলের মূর্তি রয়েছে। আমরা যেমন দুর্গা মূর্তি দেখি মহিষাসুরকে বধ করছেন- এই মূর্তিরও এমনি রূপ। দুধের মতো সাদা শিব মন্দিরটির ঠিক দক্ষিণ দিকে দেবী মহিষমর্দিনীর মন্দির। মন্দিরের বেদিতে অধিষ্ঠিতা পিতলের তৈরি দশভূজার দুর্গা মূর্তি। শত শত বছর ধরে ভক্তদের বিশ্বাস- প্রতিষ্ঠিত পিতলের দশভূজা মূর্তির নিচেই একটি গর্তের মধ্যে রয়েছে দেবী সতীর দেহাংশ-মন।

 

Bakreshwar2

 

বক্রেশ্বর শুধুমাত্র শৈবতীর্থ বা শক্তিপীঠ হিসেবে বিখ্যাত নয় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। এ অঞ্চলের আশেপাশে দশটি উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে। মন্দিরকে ঘিরেই রয়েছে সাতটি উষ্ণ জলের কুণ্ড। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উষ্ণ প্রস্রবণ এবং দেবদর্শনের টানে বক্রেশ্বরে আসেন। ভক্তের বিশ্বাস পাপহরা গঙ্গা উষ্ণ কুণ্ডে স্নান করলে সমস্ত অসুস্থতা এবং পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। কথিত আছে অষ্টাবক্র মুনী পাপহরা গঙ্গায় স্নান করে পাপমুক্ত হয়ে স্বাভাবিক দেহ ফিরে পেয়েছিলেন। অষ্টাবক্র মুনীর আরাধ্য বলেই এখানকার মহাদেবের নাম বক্রেশ্বর মহাদেব। বক্রেশ্বর নদীর পাশেই মহাশ্মশান আছে। সেখানে সাধনা করতে আসেন বহু বীরাচারী তন্ত্র সাধক, অঘোরী সাধু, কাপালিক।

 

Bakreshwar3

 

বক্রেশ্বর শক্তিপীঠকে একটি মহাশক্তি পীঠ হিসেবে বিবেচনা করা় হয়। এই পীঠকে কাশীর সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। কাশীতে যেমন গঙ্গার তীরে দেবাদিদেব বিশ্বনাথের সঙ্গে মা অন্নপূর্ণা ভক্তের মনস্কামনা পূর্ণ করে আসছেন তেমনি এখানে পাপহরা নদীর তীরে বক্রনাথ মহাদেবের দেবী হয়ে অধিষ্ঠিতা মহিষমর্দিনী মা দুর্গা মহাশক্তি রূপে বিরাজিতা হয়ে শত সহস্র বছর ধরে ভক্তের কল্যাণ করে আসছেন। মানুষের বিশ্বাস, আজও ভক্তিযুক্ত মনে মায়ের কাছে কিছু চাইলে মা কখনও তাঁর সন্তানদের বিফল মনোরথ করেন না।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...