চাঁদের মাটিতে পা রাখার পরেই ইসরোর লক্ষ্য হল সূর্য। ইতিমধ্যে তার দিন ঘোষণাও হয়ে গিয়েছে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর সূর্য অভিযানের জন্যে রওনা দেবে ইসরোর আদিত্য এল-১। এটি হচ্ছে ভারতের প্রথম সূর্য অভিযান। এই অভিযান সফল হলে সূর্যকে কাছ থেকে পেয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষণ এবং সেটা গবেষণা করতে পারবে ইসরো।
চন্দ্রযানের মতন এই সূর্য অভিযানেও ‘পশ্চিমবঙ্গের’ নাম যুক্ত হয়েছে। শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দা জন্মেজয় সরকার আদিত্য এল-১ অভিযানে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় পালন করছেন। সূর্যের যেই অতিবেগুনি রশ্মি সেটার পর্যবেক্ষণের জন্য এই অভিযানে এক টেলিস্কোপ পাঠাচ্ছে ইসরো, সেই টেলিস্কোপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আমাদের জন্মেজয়।
ছোটবেলায় শিলিগুড়ির এক জ্যোতির্বিজ্ঞান ক্লাব ‘সোয়ান’–এর সদস্য হিসেবে আকাশ দেখা শুরু হয়ে জন্মেজয়ের। তিনি ভারতে প্রথমবার এইচ আলফা টেলিস্কোপ দিয়ে সূর্যগ্রহণের ছবি তোলেন। তাঁর স্কুল ও কলেজ সবই শিলিগুড়িতে। তারপর পদার্থবিদ্যা নিয়ে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই মহাকাশ পদার্থবিদ্যা বা অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে চর্চা শুরু হয় জন্মেজয়ের। এরপর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান ইইউকা (পুনের ইন্টার ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স )- তে।
২০১৯-এ তিনি যেই টেলিস্কোপটি তৈরির দায়িত্বে ছিলেন, সেটি এমন ভাবেই বানানো হচ্ছে যাতে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির গতিপ্রকৃতির উপর নজর রাখতে পারে। শিলিগুড়ির জন্মেজয় এই টেলিস্কোপ তৈরিতে প্রথম থেকেই জড়িয়ে রয়েছেন।
ইসরো এই সূর্য অভিযানের জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল ইইউকা। এই প্রতিষ্ঠানের উপরই দায়িত্ব ছিল আদিত্য এল-১’এর সোলার আলট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ (এসইউআইটি বা সুট) তৈরির।
আদিত্য এল-১ চন্দ্রযানের থেকে প্রায় পাঁচগুণ বেশি পথ অতিক্রম করবে। ৪০ দিনের যাত্রাপথের শেষে কার্যত একটি শূন্যস্থানে মহাকাশযানটিকে স্থাপন করতে হবে ইসরোর বিজ্ঞানীদের।
ইসরোর বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযানের সাফল্যের পর এবার সূর্য অভিযানকেও সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন। এই অভিযান সফল হলে ইসরো ভারতকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। চন্দ্রযান ৩-এর সফল অবতরণের পর এবার আদিত্য এল-১-কে নিয়েও আশার আলো দেখছে দেশবাসী।