‘হেরিটেজ’ ঘোষনা মাহেশের জগন্নাথ ধামকে

প্রতিবছর কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম হয় এই রথযাত্রায়ায়। মন্দির সংলগ্ন ময়দানে প্রায় এক মাস ধরে চলে মেলা। অনেকের মতেই পুরীর জগন্নাথের রথযাত্রার পরই এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা মাহেশের এই রথযাত্রা। এবার ৬২৩ বছরে পদার্পণ করল শ্রীরামপুর মাহেশের রথ।

কথিত আছে মাহেশের এই রথটি ছিল কাঠের, তখনকার দিনে বিধবা মহিলারা স্বর্গবাসের বাসনায় রথের চাকার নীচে নিজেদের আত্মাহুতি দিতেন। বছরের পর বছর ধরে ঘটে চলেছিল এই ঘটনা। সে কারনেই প্রতিবার শুদ্ধিকরনের জন্য বদল করতে হত রথের চাকা। তারপর একসময় শ্যামবাজারের বসু পরিবার মার্টিন বার্ন কোম্পানির সাহায্য নিয়ে ২০ হাজার টাকায়  তৈরি করেন ৫০ ফুট উচ্চতা-৪ তলা-১২৫ টন ওজন-৯টি চূড়া-১২ টি লোহার চাকা বিশিষ্ট সম্পূর্ণ লোহার একটি রথ, রথটি ভরিয়ে তোলা হয়েছিল পৌরানিক কাহিনি-চিত্রকলায়। সেই রথটিই বর্তমানে রয়েছে।

মাহেশের জগন্নাথ মন্দির প্রসঙ্গে প্রচলিত রয়েছে, একবার সাধক ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী পুরীর মন্দিরে গিয়েছিলেন নিজের হাতে জগন্নাথ দেব কে প্রসাদ দেবেন বলে। কিন্তু সেখানকার পান্ডারা তাঁকে মন্দির থেকে বের করে দেয়। এই ঘটনার অপমানিত বোধে সেই সাধক ঠিক করেন সমুদ্রে আত্মহত্যা করবেন। কিন্তু আত্মহত্যা করতে গেলে তাঁর কানে আসে দৈববাণী, তিনি শুনতে পান কেউ যেন তাঁর অন্তরাত্মাকে আদেশ দিচ্ছে যে, হুগলি জেলার শ্রীরামপুর-মাহেশের গঙ্গার তীরে চলে যাও, সেখানে সময়মতো একটি নিম কাঠ ভেসে আসবে, সেই নিম কাঠ গঙ্গা থেকে তুলে এনে তার পুজো করলেই  জগন্নাথের পুজো পাওয়া হবে। সেইমতো তিনি শ্রীরামপুরের মাহেশে ফিরে এলেন এবং গঙ্গার তীরে অপেক্ষা করতে লাগলেন। হঠাৎ এক ঝড়-জলের দিনে তিনি লক্ষ্য করলেন গঙ্গা থেকে ভেসে আসছে একটি নিম কাঠ। মিলে যায় দৈববাণী। তিনি তৎক্ষণাৎ সেই নিম কাঠ গঙ্গা থেকে তুলে আনলেন এবং গঙ্গার পাড়েই একটি ছোট্ট মন্দির প্রতিষ্ঠা করে এই নিম কাঠ থেকে জগন্নাথ-বলরাম- সুভদ্রা তৈরী হবার পর সেই বিগ্রহকে পূজা করলেন। পরবর্তী সময়ে সেই মন্দিরে টি ভগ্নদশায় চলে যাবার পর গঙ্গার অদূরেই বর্তমান জগন্নাথ মন্দিরটি স্থাপিত হয়। নিম কাঠ দিয়ে নির্মিত সেই বিগ্রহ আজও রয়েছে মন্দিরে। মাহেশের রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে বহু মনীষী এখানে এসেছিলেন। কথিত রয়েছে শ্রী চৈতন্যদেব থেকে পরমহংস রামকৃষ্ণ সকলেই এই মাহেশের রথযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন।

৬২৩তম রথযাত্রার রশি টেনে রথযাত্রার উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জন্য বেশ কয়েকদিন ধরে প্রশাসনিক ব্যাস্ততাও ছিল চরমে। তবে বহু প্রতীক্ষার পর মাহেশের এই জগন্নাথ ক্ষেত্রটিকে 'হেরিটেজ' ঘোষনা করেছে রাজ্য সরকার। সেইমত শুরু হয়ে গিয়েছে কাজও। জিটি রোডের ওপর  নির্মিত হবে তোরন, যেটি মহাপ্রভু দ্বার নামে পরিচিত হবে, এর পাশাপাশি মন্দির সংস্কারের কাজও চলছে , তৈরী হচ্ছে গেস্ট হাউস, মন্দির সংলগ্ন নাট মন্দিরকেও নতুন রুপে সাজানো হবে।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...