দেবী দুর্গার পুজো করতে গেলে সব থেকে আগে যা প্রয়োজন তা হল— পবিত্র মন। যে দেবী অসুরকে বিনাশ করেন তাঁর আরাধনা করতে গেলে আমাদের মনের মধ্যে থাকা আসুরিক প্রবৃত্তিকে সবার আগে দমন করা প্রয়োজন। এরপর আসে বাহ্যিক নানা আচার, বিচারের কথা। দেবীভাগবত পুরাণে বলা হয়েছে, দেবী পূজার জন্য বেশ কতগুলো কর্তব্যকর্ম পালন করে চলতে হয়। সেই কর্তব্যকর্ম গুলি কী কী তা আজকে আমি আপনাদের বলব।
দেবীভাগবত ও অনান্য একাধিক পুরাণে দেবী পূজার কর্তব্যকর্ম বিশদে ব্যক্ত হয়েছে। দেবীকে প্রথমে আমন্ত্রণ বা আবাহন করতে হয়, তারপর তাঁকে আসন ও মুখ ধোয়ার জল দিতে হবে। এরপর তার উদ্দেশ্যে জল দান করতে হবে শরীর ও মাথা ধোয়ার জন্য। এই প্রক্রিয়াকে ‘অভিষেক’ বা ‘প্রতীকী স্নান’ বলা হয়। দেবী পূজার এই সমস্ত একাধিক পর্যায়ে মূলত দেবীকে বরণ করে তার প্রতি অন্তরের ভক্তি জানানো হয়। দেবীকে মূলত ষোড়শ উপচারে পুজো করা হয়।
দেবীর পূজার গুরুত্বপূর্ণ ষোড়শ উপচারগুলি হল-
১। আসন- দেবীকে বসবার জন্য আসন প্রদান করা হয়।
২। আবাহন- যখন দেবীকে অন্তর থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়
৩। পাদ্য- এটি দেওয়া হয় দেবীর পা ধোওয়ার জন্য।দেবীর চরণে প্রতীকীভাবে জল দিয়ে পা ধোয়ার জন্য দেওয়া হয়।
৪। অর্ঘ্য- দেবীর উদ্দেশ্যে দুর্বা, আতপ চাল নিবেদন করা হয়।
৫। আচমনীয়-মায়ের মুখ আঁচানোর জল।
৬। মধুপর্ক- কুশিতে মধু দিয়ে মা দুর্গার ঘটে দেওয়া হয়।
৭। জলদান- দেবীর শরীর ও মাথা ধোওয়ার জন্য জল দেওয়া হয়, এই জলদানকে অভিষেক করানো বলে।
৮। বস্ত্র- পৈতে সহ দেবীকে কার্পাস বস্ত্র নিবেদন করতে হয়।
৯। আভরণ-দেবীকে শাখা, সিঁদুর, আলতা নিবেদন করা হয়।
১০। গন্ধ-দেবীর ঘটে চন্দন নিবেদন করতে হবে।
১১। পুষ্প- দেবীর ঘটে ফুল নিবেদন করতে হবে।
১২। ধূপ-দেবীকে ধূপ দেখাতে হবে।
১৩। দীপ-দেবীকে দীপ দেখাতে হবে।
১৪। নৈবেদ্য- দেবীর জন্য বিশেষভাবে খাবার প্রস্তুত করা হয় এবং দেবীর উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য সাজানো হয়।
১৫। পানীয়-দেবীকে পান করার জন্য গঙ্গা জল দিতে হবে।
১৬। পুনরাচমনীয় ও তাম্বুল-আবার পুনরায় দেবীকে জল দিতে হয় আর পান দিতে হয়।
এরপর দেবীর গলায় মালা পরিয়ে ভক্তিসহকারে দেবীর আরতি করা হয় ও পুরোহিত দেবীর ভক্তিসহ স্তব ও প্রণাম করেন। এই সকল উপাচারের মধ্য দিয়ে একজন পুরোহিত/ভক্ত দেবীর পুজো করেন। তাই এই সকল পূজা পদ্ধতি গুলো কেবল অনুষ্ঠান নয়, কেবল আচার নয়, এগুলি অন্তরের আবেগ , শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও একাগ্রতাকে প্রকাশ করে।
দেবী ভাগবতে বলা হয় যে, যে ব্যক্তি, মন, কাজ ও বাক্যের দ্বারা শুদ্ধ, সে যদি দেবীর অর্চনা করেন, তবে সেই অর্চনা বা পূজা সাফল্যমন্ডিত হয়। অর্থাৎ দেবী পূজা সাফল্য লাভ করতে গেলে এই সকল কর্তব্য কর্মের অতিরিক্ত যা থাকা প্রয়োজন, তা হল, শুদ্ধ চিন্তা, সৎকর্ম এবং সত্যবাদীতার মত সত্ত্ব গুণ। এই তিনটি গুন থাকার জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই মনের মধ্যে দয়া, মায়া, মমতা,উদারতা ইত্যাদি গুণগুলোর থাকা আবশ্যক। এছাড়া দেবীভাগবতে আরও উল্লেখ করা আছে যে, যে ভক্ত সবসময় দেবীর নাম জপে রত, যে ভক্ত দান করে, যে ভক্তের অন্তরে ভক্তি রয়েছে এবং যে ভক্ত শিব প্রিয় - দেবীরও তেমন ভক্তই পছন্দ। অর্থাৎ এই সকল গুনাবলী যুক্ত ভক্ত দেবীর আরাধনা করলে দেবী খুব সহজেই প্রসন্ন হন।