অপরাধী সনাক্তকরণে হাজার একটা অত্যাধুনিক পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে থাকেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। এতো মানুষের মধ্যে থেকে একজন অপরাধীকে খুঁজে বের করা, সহজ কাজ নয়। কিন্তু , যিনি অপরাধী শনাক্তকরণের পদ্ধতি ও বিজ্ঞানের জন্ম দিয়েছেন , স্পষ্ট করে বলতে গেলে যাঁর হাত ধরে আজকের এই অত্যাধুনিক পদ্ধতির রূপ প্রকাশ পাচ্ছে , যিনি ফরেন্সিক গবেষণার ভোল বদলে দিয়েছিলেন-তিনি অ্যালফানস বার্টিলন, জন্ম ১৮৫৩ সালের ২৩এপ্রিল। এমনকি আর্থার কোনান ডোয়েল তাঁর উপন্যাসে অ্যালফানস বার্টিলন কে সম্মান জনাতে ভোলেন নি ।
কিন্তু এই এতো কথা বলছি তার কারণ এই কানের গঠন দিয়ে অপরাধী চিহ্নিতকরণের যে অভিনব পদ্ধতির কথা তিনি বলেছিলেন আজ সেই পথেই গোটা ফরেনসিক জগৎ অনুসারী হতে চলেছে। সে প্রসঙ্গে বলতে গেলে একটু আগে থেকেই বলি - এই যে এখন ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন হয় অর্থাৎ আঙুলের ছাপ দেখে সহজেই অপরাধী শনাক্তকরন, তার কোনো ধারণাই উনিশ শতকের শেষ দিকে গোয়েন্দাদের ছিল না । এর সূচনা বার্টিলনের হাতেই ,নাম অ্যান্থ্রপোমেট্রিক পদ্ধতি। যে পদ্ধতি বিকাশের মাধ্যমেই জন্ম নিয়েছে আজকের বায়োমেট্রিক পদ্ধতি। অনেকে আবার একে ‘বার্টিলন সিস্টেম’ বলেও ডাকতেন।
তখন অবশ্য পদ্ধতিটা বেশ জটিল ছিল। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের উচ্চতা, গায়ের রং, চুলের রং, চোখের তারার ছবি সমস্তকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ রেকর্ড নিতে হত। তবে এভাবেই একের পর এক অপরাধীকে শনাক্ত করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন বার্টিলন। শুধু ফ্রান্স নয়, পৃথিবীর সমস্ত দেশেই খুব তাড়াতাড়ি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। যদিও এই পদ্ধতি এখনো প্রযুক্তিগত ভাবে অনেক সহজে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা কার্যকরী করেন।
ইতিমধ্যেই তিনি আরো একটু সহজ পন্থার আবিষ্কারের কথা ভাবেন। সময়টা ১৮৮০ সাল। কিছু অপরাধীর ছবি দেখে বার্টিলন ভাবেন যে, কান দেখে অপরাধী শনাক্ত করলে কেমন হয় !! ব্যস.., শুরু হল অপরাধীদের কানের ছবি নিয়ে গবেষণা। তার নির্দেশেই ফ্রান্সের নানা জেলখানায় বন্দী অপরাধীদের ছবি তোলা শুরু হলো। কিন্তু নতুন কিছু আবিষ্কারের আগেই ১৯১৪ সালে মারা গেলেন বার্টিলন। কিন্তু অতি সম্প্রতি তার এই কানের গঠন সংক্রান্ত গবেষণালব্ধ কিছু তথ্যের উপর ভিত্তি করতে শুরু করেছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ তাদের মতে, এখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আইরিশ স্ক্যানের থেকেও ‘কানের গঠন’ অনেক নিখুঁত তথ্য দিতে পারবে । এতো বছর আগে বিজ্ঞানের জগতে যে বিপ্লব ঘটিয়েছেন বার্টিলন এখন অপেক্ষা তাঁর অসম্পূর্ণ গবেষণা থেকে আর কি কি নানা সূত্র আসতে পারে । যা হয়ে উঠবে সময়োপযোগী , প্রতিরক্ষা ও অপরাধ দমনে সহযোগী ।