শরতের শিউলি

শরৎকালের আগমনের সাথে সাথেই আকাশ বাতাস মুখরিত হয় শিউলি ফুলের গন্ধ| নিকটান্থেস প্রজাতির এই ফুলটির দেখা মেলে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান প্রভৃতি জায়গায়| জায়গা বিশেষে এই ফুলটি শেফালী নামেও পরিচিত| এই ফুলটি পশ্চিমবঙ্গের ও থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের রাষ্ট্রীয় ফুল হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে|

 শরতের ভোরে শিশিরভেজা ঘাসের উপর ছড়িয়ে থাকা শিউলি এক স্বর্গীয় দৃশ্যের সৃষ্টি করে| এই ফুল যেহেতু শরৎকালে ফোটে তাই এই ফুলটিকেই দুর্গাপূজার আগমনী ফুলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে| এই ফুল রাতে ফোটে ও সকালে ঝরে যায়|

এই ফুল শুধুমাত্র পূজার কাজেই ব্যবহার হয় তা নয়| এই ফুল থেকে প্রাকৃতিক হলুদ রং তৈরী করা যায়| এই ফুলের বৃন্তটি শুকিয়ে গুঁড়ো করে তার থেকে হলুদ রং তৈরী করা হয়| শিউলি ফুলের পাতা, বীজ ও ফুল থেকে নানা আন্টি-ভাইরালআন্টি-ফাংগাল ওষুধ তৈরী করা যায়| শিউলির পাতা জ্বর, আর্থরাইটিস প্রভৃতির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়| খুসকির সমস্যায় শিউলির বীজ খুব উপকারী| সাইটিকার ব্যথায় শিউলি পাতা ও তুলসীপাতা ফোটানো জল খেলেও উপকার মেলে| আর্থরাইটিসের ক্ষেত্রেও এই শিউলি ও তুলসী ফোটানো জল উপকার দেয়| একধরনের হার্বাল চায়ের কাজ করে এই মিশ্রণটি|

এবার আসা যাক পুরাণের কথায়, হিন্দু পুরাণ মতে, শিউলি ফুলের আরেক নাম পারিজাত| কথিত আছে, শ্রী কৃষ্ণের স্ত্রী রুক্মিণী ও সত্যভামার বড় ইচ্ছে ছিল তাদের বাগানে স্বর্গের পারিজাত বৃক্ষ বসানোর| স্ত্রীয়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য কৃষ্ণ স্বর্গের বাগান থেকে পারিজাত বৃক্ষের একটি শাখা ভেঙ্গে এনে সত্যভামার বাগানে বসিয়ে দেন| সেই গাছে ফুল ফোটার পর সেই ফুল রুক্মিনির বাগানেও পড়ে| এই ঘটনাটি ইন্দ্রদেব জানার পর যথারীতি রেগে যান এবং অভিশাপ দেন ওই গাছে ফুল ফুটলেও ফল কোনদিনও হবে না| সেই থেকে পারিজাত ফুলের গাছে তথা শিউলি ফুলের গাছের বীজ থেকে প্রাণ সঞ্চার হয় না|

আরেকটি গল্প থেকে জানা যায়, পারিজাতিকা নামক এক অপূর্ব সুন্দরী নাগরাজকন্যা সূর্যদেবের প্রেমে পড়ে তাকে কামনা করেন| কিন্তু অধিক চেষ্টার পরেও ব্যর্থ হওয়াতে তিনি দুঃখে আত্মহত্যা করেন| তার শরীরের চিতাভস্ম থেকে জন্ম হয় পারিজাত বৃক্ষের| যার ফুল সূর্যের স্পর্শ পাওয়া মাত্রই মাটিতে ঝরে পড়ে অশ্রুবিন্দুর মতো এক ব্যর্থ প্রেমের প্রতীক হিসেবে| তাই আজও সূর্য ওঠার আগেই ঝরে যায় স্বর্গীয় শোভাধারী শিউলি| 

      কিন্তু যত গল্পই প্রচলিত থাকুক না কেন এই ফুলকে কেন্দ্র করে, শিউলির গন্ধ কিন্তু শরতের আগমনের বার্তা বহন করে আনে তা কখনোই অস্বীকার করা যাবে না। এবং ছোটবেলার সেই ফুল কুড়োনোর মজাও অন্য ফুলের মধ্যে আসবেনা। একেবারে ছোট যারা, তারা মাটিতে পড়ে থাকা ফুল কুড়িয়ে আনতে বড়ই খুশি হয়।আমরা বড়রাই বা কম যাই কিসে? এক মুঠো শিউলি ফুলের গন্ধ ভুলিয়ে দিতে পারে মনের সব দুঃখ তা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করবেন।  

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...