মাহেশের সুপ্রাচীন রথ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য

পুরীর রথ উৎসবের পর দেশের মধ্যে দ্বিতীয় প্রাচীনতম রথ উৎসব হল হুগলীর শ্রীরামপুরের ‘মাহেশ রথযাত্রা’। এই বছর মাহেশের রথ যাত্রার ৬২৭তম বছরে পড়ল। রথের দিন সকাল থেকেই ভক্তের সমাগম মাহেশ জুড়ে। সকাল থকেই শুরু হয়ে গিয়েছে পূজা-অর্চনা। তিথি মেনেই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার রথের দড়িতে টান পড়বে। সেই রথ মূল জগন্নাথ মন্দির থেকে মাহেশ গুন্ডিচা মন্দির (মাসীরবাড়ি) অবধি টানা হবে। আবার উল্টোরথের দিন রথটিকে জগন্নাথ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়।

vhujyteax

কথিত আছে, সাধক ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী ৬২৭ বছর আগে পুরীতে গিয়ে মহাপ্রভু জগন্নাথকে নিজের হাতে ভোগ নিবেদনের করার ইচ্ছে হয়। কিন্তু পুরির মন্দিরের পাণ্ডারা বাধা দেওয়ায় তিনি ভোগ নিবেদন করতে পারেননি। শোনা যায়, ফিরে এসে তিনি স্বপ্নাদেশ পান যে গঙ্গায় ভেসে আসা নিমকাঠ দিয়ে বিগ্রহ তৈরি করার। তারপর সেই নিমকাঠ দিয়ে তৈরি হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি, এখনও মাহেশের এই মূর্তিগুলি সেই প্রাচীনকালের। মাহেশকে শ্রীচৈতন্যদেব 'নব নীলাচল' অর্থাৎ 'নতুন পুরী' বলে নামকরণ করেছিলেন।

qqwqRathJatra-2

জানা যায় আগে কাঠের রথ থাকলেও, ১৩৭ বছর আগে লোহার রথ তৈরি হয়। এটি তৈরি করে মার্টিন বার্ন কোম্পানী। এই রথের উচ্চতা ৫০ ফুট এবং ১২৫ টন ওজন। এই রথের লোহার বারোটি চাকা রয়েছে। এই রথের একতলায় চৈতন্যলীলা, দ্বিতীয় তলে কৃষ্ণলীলা এবং তৃতীয় তলে রামলীলা চিত্রিত করা আছে। একদম চার তলায় বিগ্রহ বসানো হয়। সেই সময় এই রথ তৈরি করতে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল । প্রতি বছর রথের আগে রথের কাঠ বদলাতে হয় এবং এর জন্য খরচ পড়ে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা।

নারায়ণই যেহেতু কলিকালের জগন্নাথ, সেই কারণে নারায়ণ শিলাকেই প্রথমে রথে চড়ানো হয়। তারপর সুভদ্রা, বলরাম এবং একেবারে শেষে জগন্নাথকে তোলা হয় রথের ওপর। রথযাত্রার দু’দিন আগে থেকে শুরু হয় যায় ‘নবযৌবন উৎসব’। প্রথা অনুযায়ী, স্নানযাত্রার পর মন্দিরের দরজা ভক্তদের জন্য বন্ধ থাকে কারণ কথিত আছে, এইসময় জগন্নাথ দেবের জ্বর আসে এবং কবিরাজের পাঁচন খেয়ে জ্বর সারার পর হয় শুরু হয় নবযৌবন উৎসব। রাজবেশে সাজানো হয় মহাপ্রভুকে। এই বিশেষ দিনেই তাঁকে পরানো হয় রুপোর হাত। খিচুড়ি, অন্ন, পায়েস - এই তিন নিয়ে মাহেশ।

এতদিন শ্যামবাজারের বসু পরিবার এই রথের খরচ বহন করত কিন্তু বর্তমানে এই খরচ দেখভাল করবে রথ সংষ্কার কমিটি। গোটা বছর জুড়ে তারা এই রথ রক্ষাণাবেক্ষণের বিষয়টি দেখে আসবেন। করোনা অতিমারি পরিস্থিতিতে দুই বছর রথযাত্রা স্তগিত রাখা হয়েছিল। তবে ২০২২-এ স্বাভাবিক ভাবেই ধুমধাম করে পালিত হয় মাহেশের রথাযাত্রা। বেলা দুটোয় মন্দির থেকে তিন বিগ্রহকে বের করে রথে তোলা হবে। এরপর বেলা চারটে নাগাদ রথের রশিতে টান পড়বে।

জগন্নাথ মন্দিরের পাশে স্থানপিঁড়ির মাঠে বসেছে মেলা। রথযাত্রা উপলক্ষ্যে এবার পুরীর মতনই মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরেও ধ্বজা লাগানো হবে। যাঁরা এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায়, তাঁদের নাম নেওয়া হচ্ছে অন লাইনে।

এবছর মাহেশের জগন্নাথ মন্দির সংস্কারের পর নতুন করে সেজে উঠেছে। পর্যটন সার্কিটের আওতায় আনা হয়েছে। তার ফলে সারা বছর মানুষ দেখতে আসেন মাহেশ মন্দির। রথ উৎসবে সামিল হতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা আসেন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...