বন্ধু দেবতাদের সঙ্গে আবির খেলায় মাতেন মদনমোহন

দোলের উৎসবে মেতে ওঠেন কৃষ্ণ। শ্যাম অঙ্গে লাগে ফাগ আবির, কুমকুম গুলালের ছোঁয়া। নবরূপে নবরসে ভক্তদের কাছে এদিন তিনি ধরা দেন।

কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে দোলযাত্রা উৎসব পালিত হয়। শ্রীকৃষ্ণ এখানে পূজিত হল মদনমোহনরূপে।  উনিশ শতকের শেষের দিকে মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মদনমোহন মন্দির। রাজবংশের আদি দেবতা হলেন মদনমোহন।  কোচবিহার মহারাজাদের আমলে আনুমানিক ৩৫০ বছর আগে এই দোলযাত্রা উৎসবের সূচনা হয়েছিল।

দোলের আগের দিন মন্দিরের কাছে রাসমেলার মাঠে খড় দিয়ে তৈরি হয় বুড়িঘর। ভেড়ার লোম দিয়ে পুজোর পরে সেই ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কুলদেবতা মদনমোহন বিগ্রহ, ডাংগোরাই ও রাজমাতা মন্দিরের বিগ্রহ পৌঁছয় রাসমেলার মাঠে। এই উৎসবে স্বয়ং বড় মদনমোহন মন্দির থেকে বের হন। বুড়িঘর পোড়ানোর পরে আবার মন্দিরে ফিরে যান মদনমোহন। মদনমোহন মন্দিরে ফিরে আসলে রাতে দোলের অধিবাস অনুষ্ঠিত হবে। গন্ধ তেল, ধূপধুনো দিয়ে এই অধিবাস হয়। স্নান পর্বের পর দোলের দিন অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ পুজো। ওই দিন থেকে পঞ্চম দোল পর্যন্ত মদনমোহন বারান্দায় অধিষ্ঠান করেন।  

মদনমোহনকে আবির দিয়ে রঙের উৎসবে মাতেন মানুষ। দোলের পরের দিন মদনমোহনকে আবার পালকি করে রাসের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। এই প্রথাকে বলে দোলসোয়ারি। দোল উৎসব উপলক্ষে ইতিমধ্যে মদনমোহন মন্দির সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। শ্রীকৃষ্ণের ১০৮টি নামের সূত্র ধরে বিভিন্ন মন্দিরের একক মদনমোহন বিগ্রহের সঙ্গে তাঁর বন্ধু দেবতারা আবির খেলেন। এটাই রাজ আমলের পরম্পরা। বন্ধুদের নিয়ে মদনমোহন দেব দোলের পরদিন আবির খেলেন। প্রচলিত ওই বিশ্বাসের জন্য কোচবিহারেও আবির খেলা হয় দোলের পরদিন। রাজ আমল থেকেই কোচবিহারের দোল উত্‌সবের মূল আকর্ষণ রাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন স্বয়ং। দোল সওয়ারি উত্‌সব বাসিন্দাদের কাছে ‘বন্ধু’দের নিয়ে মদনমোহনের আবির খেলা হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...