“ধনধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদেরই বসুন্ধরা”| তারই মাঝে অবস্থিত একটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ যার ফ্লোরা নিয়ে এখন নতুন করে কিছু বলার নেই| যাই বলা হবে তাই অসম্পূর্ণ| কি নেই পশ্চিমবঙ্গে?গোলাপ, জুঁই, মালতিতে তো বাগান সবসময় ভর্তি থাকে| তারসাথে রয়েছে নানা পাহাড়ি গাছপালা| তাদের মধ্যে থেকে একটি নিয়েই আজ আমরা আলোচনা করব| দার্জিলিংয়ের পাহাড়ের আনাচে কানাচে ফুটে থাকা ফুল রডোডেনড্রন আজ আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু|
এই উদ্ভিদটি সাধারণত হয় চিরসবুজ নইলে ডেসিডুয়াস প্রকৃতির হয়ে থাকে যা মূলত এশিয়ার নানা প্রান্তে পাওয়া যায়| এছাড়াও নর্থ আমেরিকার পাহাড়ি অঞ্চলে এই উদ্ভিদটির আধিক্য লক্ষ্য করা যায়| এই ফুলটিকে নেপালের জাতীয় ফুলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে| এই ফুলটি সাধারণত শীতকালের শেষের দিক থেকে ফুটতে শুরু করে|
এই সমগ্র ভারতেই এই উদ্ভিদের আলাদা আলাদা ৮০ টি প্রজাতির খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীগণ|হিমালয় পর্বতের নানা রকম উচ্চতায় এই উদ্ভিদের নানা রকম আধিক্য দেখা যায়| পূর্ব হিমালয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি এই গাছের অস্তিত্ব দেখা যায়| পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় এই গাছের ১৯টি প্রজাতির খোঁজ ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে| এই গাছটির চারপাশে সাধারণত মস ও লাইকেন জাতীয় গাছের আধিক্য দেখা যায়|
এই গাছটি মূলত ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় জন্মায়|যে মাটিতে অত্যধিক পুষ্টি ও মাটিতে অ্যাসিডের পরিমান বেশি থাকে সেই মাটিতে এই গাছ সবচেয়ে ভালো হয়|যে মাটিতে অ্যাসিডের মাত্রা ৪.৫ থেকে ৬.০ পি.এইচ এর মধ্যে থাকে সেই মাটিতেই বেঁচে থাকে এই উদ্ভিদ|এই উদ্ভিদের মূল খুবই পাতলা ও স্পর্শককাতর প্রকৃতির হয়ে থাকে|এই গাছটিকে বাঁচানোর জন্য চাই সঠিক মাত্রায় মাটি নিষ্কাশন| যেইসব এলাকায় নিস্কাশন ব্যবস্থা খারাপ সেইসব এলাকাতে এই গাছ বাড়তে পারে না| এদের মূল অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ার কারণে অতিরিক্ত জল পেতে পেতে এই গাছের মূল পচতে শুরু করে এবং একসময়ে গাছটি মারা যায়| এই গাছটি মূলত হাফ রোদ ও হাফ ছায়া এলাকায় রাখলে গাছ অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে| এই গাছে নানা রঙের থোকায় থোকায় ফুল ফুটতে দেখা যায়|
এই উদ্ভিদের পাতা মাঝে মধ্যেই লিফ ক্লোরসিস রোগের শিকার হয়ে থাকে| যেই রোগে পাতার মধ্যশিরা সবুজ রংয়ের থাকলেও পাতার অভ্যন্তরে থাকা কলা ধীরে ধীরে হলুদ বর্ণের হয়ে যেতে থাকে| গাছের এই রোগটি সাধারণত মাটিতে লোহার অভাব থাকলে, জল নিষ্কাসন প্রক্রিয়া সঠিক না থাকলে বা অত্যধিক পরিমান সার প্রয়োগের ফলে হয়ে থাকে| ঠিক মতো যত্ন করে রাখতে পারলে এই গাছ সত্যই মনকে এবং চোখকে যথেষ্ট আরাম দেয়।