হাজারে এক রবি

 “হরিদাসের বুলবুল ভাজা

টাটকা তাজা, খেতে মজা

এ ভাজা খেলে পরে

জমবে না আর খাজা গজা...”

মাথায় চোঙ্গা টুপি। মুখে রং। সেই গায়ককে মনে পড়ে? গানের তালে তালে বুলবুলভাজা বিক্রি করতেন যিনি। “ শ্রীমান পৃথ্বীরাজ” ছবির প্রথম সিনেই যাঁকে দেখা যায়?

শ্যাওলা ঢাকা উঠোন নারকেল মালা দিয়ে যে অমন ভালো পরিস্কার করা যায়, তা ধনঞ্জয় ছাড়া আর কে শেখাত বাঙালিকে?

ঢোল হাতে সেই গেঁয়ো বায়েনকে ছাড়া  বাঙালির শৈশব ভাবাই যায় না!

গোল্লা গোল্লা চোখ। টাক মাথা। নাতি দীর্ঘ মানুষ। কিন্তু চেহারা দীর্ঘতা দিয়ে তাঁকে মাপা যায় না।

অভিনয় করেছিলেন  বাঘের সঙ্গে। তাও একেবারে দক্ষিণী বাঘ। বাংলা বোঝে না। তবে এতটুকু ঘাবড়াননি তিনি। সামলে নিয়েছিলেন তাঁকে। আসলে তিনি ‘মাস্টার অফ এভরিথিং’। রবি ঘোষ। হাসিয়েছেন। কাঁদিয়েছেন। রাগিয়েছেন। কিন্তু তিনি থেকে গেলেন ‘কমেডিয়ান’ হিসেবেই। অন ক্যামেরা যিনি অমন হাসিখুশির তুফান তুলতেন অফ ক্যামেরা তিনিই কিন্তু ততটাই রাশভারী।

জন্ম  বরিশালে। বেড়ে ওঠা কালীঘাটে। পড়াশোনা আশুতোষ কলেজে।

কলেজবেলা থেকেই শরীরচর্চার নেশা। জিমন্যাস্টিক করতেন মন দিয়ে। চাকরি পেয়েছিলেন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে।

অভিনয়ের হাতেখড়ি অবশ্য তারও অনেক আগে। স্কুলবেলায়। যত বয়স বেড়েছে তত পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অভিনয়ের নেশা। মঞ্চ দিয়ে শুরু। তারপর পর্দায়। উৎপল দত্তকে গুরুজ্ঞান করতেন।

প্রথম বড় ব্রেক তপন সিংহের "হাঁসুলিবাঁকের উপকথা”।  তারপর  সত্যজিৎ ডাক পাঠালেন "অভিযান" ছবির জন্য। মঞ্চসফল অভিনেতার জীবন বাঁক নিয়েছিল রূপালী পর্দার জগতে। একেএকে আরও ছবি। “গল্প হলেওসত্যি”, “গুপিবাঘা ফিরে এলো”, “হীরক রাজার দেশে”, “গুপি গায়েন বাঘা বায়েন”, “অরণ্যের দিনরাত্রি”, “পদ্মা নদীর মাঝি”, “কাপুরুষ ও মহাপুরুষ”।

ছবির শুটিং বাদে বাকি সময়টা ডুবে থাকতেন বইয়ের পাতায়। ভালোবাসতেন সাহিত্যিক সঙ্গ। বিশ্বাস করতেন অভিনেতা হতে গেলে মেধার চর্চাটা জলের মতোই জরুরী। মেধায়-মননে-চর্চায় বেঁচে থাকা।

বাঙালির কাছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি একটাই নাম। যাঁর কোনও বিকল্প হয় না। রবি ঘোষ ওরফে রবি ঘোষ দস্তিদার। হাজারে একটাই।

জন্মগ্রহণ করেছিলেন আজকের দিনে। সালটা ১৯৩১।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...