নিজেকে কেন ‘হাসির ট্রেডমার্ক’ বলেছিলেন জহর রায়

অনেকে অনেক সময়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেন-‘কী করে এত হাসান বলুন তো?’

জহর রায় বলতেন, এই প্রশ্নের উত্তর তাঁর জানা নেই। তিনি শুধু জানেন মানুষকে তাঁকে হাসাতে হবেই।নিজের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজের সমস্ত দুঃখ কষ্ট যাতনা গোপন করে সকলের সামনে এসে সং সেজে দাঁড়াই, সবাই আমাকে দেখে হাসেন। আমি হাসির ট্রেডমার্ক’।

IMG-20230918-WA0011

এক স্মৃতিচারণায় অভিনেতা হিসেবে দর্শকরা তাঁকে ঠিক কী ভাবে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন তাঁর ভক্তরা তাঁর হাসানোর স্টাইল নিয়ে থিয়োরি নামালেও সে সব তাঁকে বিশেষ স্পর্শ করে না। তিনি শুধু জানেন দর্শকদের হাসি চাই। এর বাইরে আর কিচ্ছু তিনি জানেন না।

পেটের দায়ে সং সেজে ঘুরে বেড়ান। যখন হাসির ফোয়ারা কম হয়ে আসে তখন তাঁকে আরও আরও মজা করতে হয়। লোক হাসাতে গিয়ে বুকের রক্ত বেরিয়ে এলেও তা প্রকাশ করতে নেই। চোখে জল আসা যেন পাপ।

তাঁর জীবনের ট্র্যাজেডি তিনি আবিষ্কার করেছেন ওই হাসিতেই। তাঁর চেনা বন্ধুরা তাঁর আসলগুলোকে নকল ভেবে ভুল করে। তাঁর কথায় কথায়, ‘ওরা ভুলে যান শ্লেট কালো, শ্লেট-পেন্সিলও কালো, কিন্তু লেখা হয় সাদা’।

এত কিছু সত্ত্বেও মানুষ হাসাতেই তাঁর সব থেকে ভাল লাগত। চলার পথের দুঃখ আঘাত সইতে সইতে মানুষ তাঁকে দেখে হাসার রসদ পায় এ ছিল তাঁর জীবনের পরম প্রাপ্তি। বাংলাদেশে মানুষকে কাঁদাবার লোকের অভাব নেই, কিন্তু অভাব হাসাবার লোকের। সেই অভাব পুরোন করেছিলেন জহর রায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মানুষরা।

এক যুগের ওপর মঞ্চ আর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন জহর রায়। হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন যেমন তেমন ভাবিয়েওছেন। হতাশার মেঘ জমলেও নারাজ ছিলেন সেই মেঘে বৃষ্টি নামাতে। আত্মতৃপ্তি বা উল্লাস কোনওটাই ছিল না। শুধু চোখ ছিল সামনের পথের দিকে।

তাঁর মৃত্যুর পর ‘শিল্পী সংসদ’ আয়োজিত স্মরণ সভায় উত্তম কুমার বলেছিলেন, ‘জহরদা বিদেশে জন্মালে দ্বিতীয় চার্লি চ্যাপলিনের মর্যাদা পেতেন’। শিল্পীরা তাঁদের সহকর্মী ‘জহরদা’কে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিলেও দর্শকরা কতটা কদর করতে পেরেছেন তাঁর, সেটা আজও ভেবে দেখার অবকাশ আছে।   

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...