নিজের জীবনের গেমের মোড় বারবার ঘুরিয়েছেন অশ্বিন

তিনি হতে চেয়েছিলেন ব্যাটসম্যান হয়ে গেলেন বোলার। তাও স্পিন বোলার। একসময় তামিলনাড়ুর হয়ে টপ ওর্ডারে ব্যাটিংও করেছেন। তিনিই হয়ে গেলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের এক নম্বর স্পিনার যিনি ব্যাটটা ভালো করতে পারেন। বল ঘুরিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে চারশো'র বেশি ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়ানের রাস্তা দেখিয়ে ইতিমধ্যেই কিংবদন্তীদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। তিনি রবিচন্দ্রন অশ্বিন। উলটপুরাণ কীভাবে ঘটাতে হয় জানেন তিনি। নিজের গেম নিজেই চেঞ্জ করতে জানেন তামিলনাড়ুর এই দীর্ঘাঙ্গী ক্রিকেটার।

 

ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আগে তিনি ছিলেন আইপিএল -এর দান। অর্থাৎ সর্বোপরি একজন টি-২০ বোলার। হাতের বিশেষ অস্ত্র ক্যারাম বল। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাই সুযোগ পেতে দেরি হয় নি। ধীরে ধীরে কখন যে ভারতীয় টেস্ট দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে গেলেন তা বোঝা যায়নি। ২০১০ সালে প্রথমবার দলে সুযোগ। তারপরে একের পর এক সিঁড়ি পেরিয়ে দেশের সেরা স্পিনারদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন তিনি।

Ashwin1

২০১১ বিশ্বকাপের ওয়ার্ম আপ ম্যাচ। নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপ্টিলকে যে বলটায় আউট করেছিলেন এক কথায় অনবদ্য। তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে ভারতকে প্রথম ব্রেকথ্রুটা দিয়েছিলেন তিনিই। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ জেতে ভারত। কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়াটসনকে তো পুরো নাকানিচোপানি খাইয়ে আউট করেছিলেন। ২০১১ আইপিএলের ফাইনাল। সারা টুর্নামেন্ট গেইল রাজত্ব। ২০৫ রান ফাইনালে তাড়া করা খুবই শক্ত তবু গেইল ঝড় শুরু হলে তা থামানো মুশকিল। তখন কোনও স্কোরই সুরক্ষিত মনে হবে না। তাই চেন্নাই সুপার কিংস অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে আনলেন শুরুতেই। তিন বলেই খেল খতম আরসিবি'র। পুরো সেট আপ করে গেইল কে পিছনে নিয়ে গিয়ে আউট করলেন অশ্বিন। আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি বিরাটের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার ব্যঙ্গালোর।

 

এমন ভাবেই বহু ব্যাটসম্যানকে রীতিমত বোকা বানিয়ে দেখিয়েছেন প্যাভিলিয়নের রাস্তা। বদলে ফেলেছেন নিজের বিদেশের টেস্ট রেকর্ডও।

Ashwin2

ব্যাটসম্যান অশ্বিনের কথা যদি বলেন পাঁচটা টেস্ট সেঞ্চুরির পরেও ওঁর সেরা ইনিংস ১২৮ বলে ৩৯ করা একটা টেস্ট ইনিংস। পা ফুলে ঢোল। ব্যাট করতে পারবেন কি না সন্দেহ। ওই অবস্থাতেই সিডনিতে অস্ট্রেলিয় বোলারদের চোখরাঙানি এড়িয়ে টিকে রইলেন ক্রিজে। ইমপ্যাক্ট ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারত ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জেতে ব্রিসবেন টেস্ট জিতে। সদ্য ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরিও অনবদ্য।

 

ফিল্ডার অশ্বিন মোটেই ভালো নয়। মাঠে স্লো মুভ করেন। খুব একটা ডাইভ দিতে পারেন না। তারপরেও দুটো অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ নিয়েছিলেন অশ্বিনই। ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল। ইংরেজ অধিনায়ক কুকের ক্যাচটা স্লিপে দাঁড়িয়ে নেওয়া কিন্তু মোটেই সোজা ছিল না। আর ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া দুটো ক্যাচ। একটা মরগ্যানের, অন্যটা বোপারার। ভারতের হাত থেকে ম্যাচ নিয়ে যাচ্ছিলেন দুজনে। অশ্বিনের হাতে ধরা পড়েন দুজনেই। শেষ ওভার দায়িত্ব নিয়ে শেষ করে ম্যাচ জেতান ভারতকে। ম্যাচ ফিগার চার ওভারে ১৫ রান নিয়ে দুই উইকেট।

Ashwin3

সম্প্রতি হঠাৎ করেই সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। বোর্ডের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তাঁর প্রয়োজন। আবারও ফিরে এসেছেন টি-২০ দলে। ফিরে এসে নিজেই বলেছেন, '‘প্রতিটি টানেলের শেষেই আলো রয়েছে। কিন্তু যারা সেই টানেলে থাকা আলোয় বিশ্বাস করে তারাই কেবল সেটা দেখার সুযোগ পায়।" সেই বিশ্বাস নিয়েই এগিয়ে চলেছেন রবিচন্দ্রন। টি২০ বোলারের তকমা নিয়ে দলে এসে টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বোলার। হঠাৎই ব্রাত্য সেই টি-২০ দলেই। সেখান থেকেই আবারও ফিরে আসা সেই ফরম্যাটেই। এভাবেও ফিরে আসা যায়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...