‘মহাম্ভোবৈস্তীরে কনকরুচিরে নীল শিখরে
বসন প্রাসাদান্তঃ সহজবলভদ্রেণ বলি না
সুভদ্রামর্ধস্থঃ সকল সুরসেবাবসরদে
জগন্নাথঃ স্বামী, নয়নপথগামী ভবতু মে’
কাব্যে জগন্নাথের স্বরুপ বর্ণনা করেছিলেন চৈতন্যদেব। জগন্নাথধাম এক আশ্চর্য্য ভক্তিক্ষেত্র। বছরের পর বছর ধরে কোটি ভক্তের ভক্তিরসের ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে জগন্নাথ মহিমা। মানুষের বিশ্বাস, মানুষ নিজে ইচ্ছে করলেই আসতে পারে না প্রভুর কাছে। তিনি যাকে টানেন তাকে আসতেই হবে জগন্নাথধামে।
এমন হৃদ্যের টানে বারে বারে নীলাচলে ছুটে এসেছেন চৈতন্যদেব। যেতে চেয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণদেব। কিন্তু তাঁর যাওয়া হয়নি। পরমহংসদেবের ছবি সঙ্গী করে শ্রীক্ষেত্রে এসেছিলেন শ্রী শ্রী মা সারদা।
প্রভু জগন্নাথ অবলের বল, নিরাশ্রয়ের আশ্রয়। পুরাণ মতে জগন্নাথদেব এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা। তিনি কখনও কালপুরুষ, কখনও রুদ্র, কখনও মহাকাল। রত্ন সিংহাসনে আসীন তিনি নারায়ণরূপে। রত্নবেদী তাঁর নিত্যধাম। শ্রীক্ষেত্রের পবিত্রতম ভূমি।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের গর্ভগৃহে জগন্নাথ দেবের রত্ন সিংহাসনটি কালো মুগনি পাথরে নির্মিত। এই প্রস্তর খণ্ড দৈর্ঘ্যে প্রায় ২০ ফুট, প্রস্থে ৮ ফুট, গর্ভ গৃহের মেঝে থেকে রত্ন সিংহাসনের উচ্চতা ৪ ফুট। এই রত্নসিংহাসনেই উপবিষ্ট শ্রী জগন্নাথ দেব, বলভদ্র এবং সুভদ্রা। সমগ্র শ্রীক্ষেত্রের মধ্যে শ্রীদারুদেবের এই আসনখানিই সবচেয়ে পবিত্র স্থল। একে রত্নবেদীও বলা হয়।
শোনা যায় রত্ন সিংহাসনের নীচে রয়েছে এক লক্ষ শালগ্রামশিলা। বেদির ওপর শ্রীযন্ত্র অঙ্কন করে বিগ্রহগুলিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই সিংহাসনকে বলা হয় নিত্য গোলকধাম। রাধা-কৃষ্ণের নিত্য লীলাস্থল। সিংহাসনের তিনদিকে দেবতা এবং ঋষিদের মূর্তি দেওয়ালে।
জগন্নাথদেবের গর্ভগৃহে প্রবেশ করে রত্নবেদির চারপাশ তিন অথবা সাতবার প্রদক্ষিণ করার প্রথা চালু ছিল। লোক বিশ্বাস এতে নাকি ত্রিভুবন প্রদক্ষিণের পুণ্য অর্জন হয়।