"ইংরেজ ভারত ছাড়ো"

ভারত ছাড়ো... স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়

"মুক্তির মন্দির সোপান তলে
কত প্রাণ হলো বলিদান
লেখা আছে অশ্রুজলে"

ক'দিন পরেই আসছে ১৫ই আগস্ট। আমাদের স্বাধীনতা দিবস। আমরা সবাই অনেক শ্রদ্ধায় অনেক ভালোবাসায় ঐ দিনটাকে স্মরণ করবো। কিন্তু তার কয়েকদিন আগের একটা দিনের কথা মনে রেখেছি কি? আমি ৯ই আগস্টের কথা বলবো আজকে। ৯ই আগস্ট....প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে এই দিনটা হওয়া উচিত অতি শ্রদ্ধার অতি অহঙ্কারের.... কারণ ১৯৪২ এর ঐ দিন ভারতে শুরু হয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অবিস্মরণীয় পর্ব... ভারত ছাড়ো আন্দোলন।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমিকা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। তখন অখন্ড ভারতে ব্রিটিশ শাসন একেবারে শেষের দিকে। কিন্তু তাঁরা কিছুতেই এই ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নয়। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলন ও চলছিল পুরোদমে। "ইংরেজ ভারত ছাড়ো".. ধ্বনিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশ। কিন্তু ইংরেজরাও দমন পীড়নের নীতিতে অটল হয়ে আছে। সেই সময়... শুরু হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এবং জাপান যেভাবে এগিয়ে আসছিল ভারতের দিকে তাতে ভারতের নেতারা রীতিমত চিন্তিত হয়ে পড়েন কারণ জাপান যদি ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে ভারতকে আক্রমণ করে তাহলে বহু ভারতবাসীর প্রাণ যাবে শুধুমাত্র ভারত ইংরেজদের শাসনাধীন এই কারণে।আর ভারতবাসী ইংরেজদের অত্যাচারে তখন এতোটাই হতাশ যে তারা হয়তো এবার জাপানের অধীনতা মেনে নেবে। তাই তখন গান্ধীজী ডাক দিলেন "ইংরেজ, ভারত ছাড়ো"।

১৯৪২ খ্রীষ্টাব্দের ২৬শে এপ্রিল গান্ধীজী "হরিজন" পত্রিকায় "ভারত ছাড়ো" শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। তাতে তিনি বলেন " ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবিলম্বে অবসান চাই। ভারতের স্বাধীনতা চাই কেবল ভারতের স্বার্থে নয়, চাই বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য, চাই নাৎসিবাদ, ফ্যাসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং এক জাতির উপর অন্য জাতির আক্রমনের অবসানের জন্য।" ১৯৪২ এর ৮ই আগস্ট কংগ্ৰেসের কার্য নির্বাহী সমিতি গান্ধীজীর "ভারত ছাড়ো" প্রস্তাবে আইনগত স্বীকৃতি দেয় এবং সেই দিন তারপরেই গান্ধীজী দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন "করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে".. সকল ভারতবাসীকে আহ্বান জানান তাঁর সঙ্গে বলতে "ইংরেজ, ভারত ছাড়ো"।

পরদিন অর্থাৎ ৯ই আগস্ট ভোর রাতে ইংরেজ সরকার গ্ৰেফতার করে গান্ধীজী, নেহেরু সহ কংগ্ৰেসের সমস্ত প্রথম সারির নেতাদের। কংগ্রেসকে বেআইনি ঘোষণা করে। কিন্তু আন্দোলন তখন শুরু হয়ে গেছে সারা ভারতবর্ষে। সর্বত্র শুরু হয় পিকেটিং, মিটিং মিছিল... দিকে দিকে আওয়াজ ওঠে "ইংরেজ ভারত ছাড়ো"।

প্রথম প্রথম এই আন্দোলন ছাত্র যুব সম্প্রদায় এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ক্রমশঃ এটা ছড়িয়ে পড়তে লাগলো দেশের শ্রমিক কৃষক মজদুর সম্প্রদায়ের মধ্যে। এবং প্রথম প্রথম এই আন্দোলন অহিংস থাকলেও ধীরে ধীরে এটা সহিংসতার দিকে এগোচ্ছিল। কিন্তু ইংরেজ সরকার খুব বুদ্ধি করে সমস্ত নেতাদের জেলে বন্দী করে রাখায় এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। আর ইংরেজ সরকার প্রচণ্ড কঠোর নীতি গ্রহণ করে এই আন্দোলন দমন করার জন্য। প্রচুর সম্পত্তি বিনষ্ট হয়, ইংরেজ সেনার হাতে বহু ভারতবাসীর প্রাণ যায়। উনিশশো চুয়াল্লিশেই শেষ হয় ভারত ছাড়ো আন্দোলন।

কিন্তু বিপ্লব কী কখনো ব্যর্থ হতে পারে। যে ভারতবাসীরা এই আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের প্রাণদান যে অমূল্য। এই ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পরই ইংরেজরা বুঝতে পারে যে ভারতকে আর পরাধীন রাখা যাবে না। উনিশশো সাতচল্লিশ সালে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে বাধ্য হয় ব্রিটিশরা।

কতো শত সহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। "কতো তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে"... আমরা যেন কোনোদিন কখনো ভুলে না যাই তাদের আত্মদান... কখনো যেন না ভুলি এই স্বাধীনতা আন্দোলনকে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...