শরিফাবাদের পটেশ্বরী

বাংলার শরিফাবাদ এমন এক শহর, ইতিহাস যার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আর আজ বলবো এই শরিফাবাদ রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস। শরিফাবাদ নামটি অচেনা লাগছে?  ভাবছেন এমন কোন শহর আছে পশ্চিম বাংলায়? সেখানে আবার দুর্গাপুজো! আজ সেই রহস্যের উদ্ঘাটন করবো। এই শরিফাবাদ এখন অতি পরিচিত বর্ধমান নামেই। আজ সেই বর্ধমান রাজবাড়ির দুর্গা পুজোর ইতিকথন হোক।

 এই বর্ধমান রাজবাড়ি ছিল কাঞ্চননগর এলাকায়। কিন্তু মহারাজ তেজচাঁদ শহরের একটু উঁচু জায়গায় রাজবাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন এবং মহারাজের দত্তক পুত্র রাজা মেহতাব চাঁদ সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটান ১৮৫১সালে। এই রাজবাড়িতে  রাজত্ব করেছেন মেহতাব চাঁদ, আফতাব চাঁদ, বিজয়চাঁদ এবং উদয়চাঁদ।  রাজবাড়ির এই পুজো শুরু হয়েছিল প্রায় ৩০০বছর আগে মহারাজ মেহতাব চাঁদের হাত ধরে। আর তখন থেকেই এই পুজো বাকি পুজোর থেকে এক্কেবারে আলাদা- এই বিশেষত্ব আজও একই ভাবে পরিলক্ষিত হয়।

সেই বিশেষত্ব হলো এখানকার মা দুর্গা । যিনি আদৌ মৃন্ময়ী নন, পটেশ্বরী অর্থাৎ পটে আঁকা দুর্গা। বর্ধমানের মহারাজ মেহতাব চাঁদ যখন এই পুজোর সূচনা করেন তখন থেকেই পটে আরাধনার সূচনা হয়। এর কারন, এই রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠিত কুলদেবী দেবী চন্ডী, তাই অন্য কোনো নতুন প্রতিমায় পুজো করা ছিল বিধি নিষিদ্ধ। কিন্তু সমাধান স্বরূপ বিধান দেন রাজ পুরোহিত। আর তা হলো দুর্গা পুজো করতে হলে প্রতিমার বদলে পটে আঁকা দুর্গাপুজোর আয়োজন করা যেতে পারে। সেই বিধান অনুযায়ী বর্ধমানের দাঁইহাট থেকে পটশিল্পী এসে কাজ সম্পূর্ণ করেন। পটের চালচিত্রে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনি।

রাজবাড়ির পুজো বলে কথা। তাই ভোগের ব্যবস্থাও ছিল এলাহী। ৫২ রকমের ভোগ নিবেদন করা হতো। কিন্তু এই সামগ্রিক পরিস্থিতির বদল ঘটে ১৯৫২সালে। জওহরলাল নেহেরু জমিদারি উচ্ছেদ আইন পাশ করলে ১৯৫৩সালে বর্ধমান ছেড়ে চিরকালের জন্য বেনারস চলে যান মহারাজ উদয়চাঁদ। ১৯৫৮সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য বর্ধমান রাজপরিবার রাজ্য সরকারের হাতে রাজবাড়ি তুলে দেয়। ২০০৯সালে বর্ধমান রাজবাড়ি হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের স্বীকৃতি পায়।

আজও কিন্তু এই রাজবাড়ির পুজো একইভাবে হয় ডঃ অহিভূষণ রোড, বোরাটের দেবেন্দ্রভবনে। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এই রাজপরিবারের অন্যতম সদস্য দেবেন্দ্রলাল দাস। ১১০বছর আগে এখানে সূচনা করেন এই পুজোর। এখনো পটে পুজোর ঐতিহ্য বজায় থাকলেও ভোগের বাহুল্য এ বছর আর নেই। সংখ্যাটা ৫২ থেকে নেমেছে ৩এ। করোনা পরিস্থিতিতে শুধু নিয়ম রক্ষার্থেই হবে পুজো। থাকছে না বাইরের দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার। সুরক্ষা বিধি মেনেই মাস্ক আর স্যানিটাইজারের ঘেরাটোপে ৩০০বছরের পটেশ্বরীর আরাধনা করবেন পরিবারের সদস্যরাই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...