পুরুলিয়ার অন্যতম আকর্ষণ গড় পঞ্চকোট

কলকাতা থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে  ধরে  ন্যাশনাল  হাইওয়ে ২- হয়ে পুরুলিয়া যাওয়ার  রাস্তা  ধরে  গেলেই  মিলবে  গড় পঞ্চকোটের  দেখা। কিন্তু আছে কি সেখানে? আছে বর্গী আক্রমণের জীবন্ত স্মৃতি।  আজ  সেই  ইতিহাস  বলবো।

পুরুলিয়া জেলায় পাঞ্চেত পাহাড়ের গায়ে পঞ্চকোটে পাঁচশো বর্গমিটারের মতো এলাকা  জুড়ে  দাঁড়িয়ে  আছে  পাথুরে  পাঁচিল  ঘেরা  এক  দুর্গ। এই দুর্গ বর্গী আক্রমণের সাক্ষী।  সে  প্রসঙ্গে  যাওয়ার আগে বলি এই পঞ্চকোটের প্রথম  রাজা  ছিলেন  দামোদর  শেখর। পুরুলিয়ার ঝালদা অঞ্চলের পাঁচ আদিবাসী সর্দারের  সাহায্যে এখানে  রাজত্ব  গড়ে তুলেছিলেন তিনি।  এই জায়গার নামের বিশ্লেষণ করলে খানিক মানেটা এমন  দাঁড়ায় ‘পঞ্চ’ মানে  ‘পাঁচ’ এবং ‘কোট’- অর্থ   গোষ্ঠী। ‘গড়’ শব্দের অর্থ  ‘দুর্গ’।  অর্থাৎ  সেই  পাঁচ  গোষ্ঠীর দুর্গ।

পাহাড়ের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত  পর্যন্ত বিস্তৃত এই  দুর্গের  পরিখা।  পরিখার মাঝে নৌ-পথই দুর্গে প্রবেশ করার একমাত্র রাস্তা। বাকি জায়গা ঢাকা বিশেষ ধরনের বাঁশের দুর্ভেদ্য জঙ্গলে। প্রবেশ দ্বার  থেকে  গোটা প্রাসাদ  এবং  তার চারপাশটা দেখা  যায়।

প্রায়  ২০হাজার বর্গফুট  জুড়ে ছড়িয়ে  থাকা  ধ্বংসস্তূপ  দেখে সহজেই অনুমেয় যে ,প্রাসাদের কাঠামো ছিল বিশাল।  সর্বত্র পাথরের ব্যবহার থাকলেও  মূলতঃ  রানি মহল কিন্তু তৈরী হয়েছিল চুন-সুড়কির গাঁথনি ব্যবহার করে।  মূল  কেল্লার ভিতরে দু’দিকে  লম্বা  এবং  সরু  দু’টি  ঘর আছে।  মাঝখানে  আছে  প্রস্তর  নির্মিত  রাম মন্দির।  রয়েছে তখনকার  দিনের  আরও  কিছু  জিনিসপত্র।

এবার আসি সেই বর্গী আক্রমণ প্রসঙ্গে।  বাংলার   আলিবর্দি খাঁ  ১৭৪০সালে  সরফরাজ খাঁকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন। আলিবর্দিকে প্রতিহত  করতে চেয়েছিলেন ওড়িশার নায়েব-নাজিম, সরফরাজের শ্যালক  রুস্তম  জং।  আলিবর্দি তাঁকে ওড়িশা থেকে বিতাড়িত করলে তিনি নাগপুরের মারাঠা শাসক রঘুজি ভোঁসলের দ্বারস্থ হন। রঘুজির সাহায্যে রুস্তম আবার ওড়িশার অধিকার ফিরে পান। কিন্তু আলিবর্দি ফের তাকে উৎখাত করেন।  ইতিমধ্যেই  রঘুজি মারাঠা বর্গী ভাস্কর পণ্ডিতের নেতৃত্বে একদল মারাঠা অশ্বারোহীকে বাংলায় পাঠিয়ে দেন। মারাঠা বর্গীরা ভাস্কর পণ্ডিতের নেতৃত্বে পঞ্চকোটে এই দুর্গে লুঠ চালায়। কথিত  আছে বর্গী আক্রমণের সময়ে তখনকার রাজার ১৭জন রানি একটি কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।  বাংলায় মারাঠাদের দীর্ঘ ১০বছরের ভয়ানক লুঠ ও হত্যাকাণ্ডের অবসান  ঘটে  ১৭৫১সালে  আলিবর্দি মারাঠাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করার পর।  যাই হোক, সেই যুগের ভগ্ন প্রায় স্থাপত্যের মধ্যেই  লুকিয়ে  আছে  ইতিহাস।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...