প্রায় ৭৮ বছরের পুরনো জলযান ফিরছে গঙ্গার বুকে

এবারের পুজোয় পর্যটকদের জন্য গঙ্গার বুকে নামবে, ‘দি বেঙ্গল প্যাডেল’। প্রায় আশি বছরের পুরনো এই হেরিটেজ প্যাডল স্টিমার। তাকে সাজিয়ে গঙ্গায় ঐতিহ্য-ভ্রমণ হিসেবে ব্যবহার করতে চলেছেন কলকাতা বন্দর।

দীর্ঘদিন খিদিরপুর ডকে ছিল এই স্টিমারটি। প্রথম দিকে এই স্টিমারটিকে একটি মেরিন মিউজিয়াম হিসেবে এবং পরে প্রশিক্ষণে ব্যবহার করা হত। এর ফলে পর্যটকদের আরও আর্কষণীয় করে তুলেছে এই জলযানকে। 

জানা যায়, ১৯৪৫ সালে তৈরি হয়ে স্কটল্যান্ডের এই প্যাডেল স্টিমার। যখন এই স্টিমার চলত তখন নাবিকরা যে সমস্ত কম্পাস, টেলিফোন, টাইপ রাইটার, রোপ-সহ আনুষঙ্গিক জিনিস যা সব ব্যাবহার করতেন সব কিছুই প্রর্দশিত হবে এই চলমান-ভাসমান প্যাডেল স্টিমারে।

1663872534_new-project-49

এই ৮০ বছরের পুরানো স্টিমারটি তৈরি করেছিলেন স্কটল্যান্ডের ডেনি অ্যান্ড ব্রাদার্স। স্বাধীনতার আগে মূলত দু’টি সংস্থা অবিভক্ত বাংলা ও অসমে স্টিমার পরিষেবা চালাত। ১৯৪৪ সালে নির্মিত ব্রিটেনের ডাম্বারটন শিপ-ইয়ার্ডে ৬৩ মিটার লম্বা এবং ৯.২ মিটার চওড়া ‘পি এস ভূপাল’ নামে স্টিমারটি তৈরি হয়েছিল। এখন দেশের একমাত্র প্যাডল স্টিমার এটি।

বন্দর চেয়ারম্যানের থেকে জানা গিয়েছে যে, তৎকালীন সময়ে স্কটল্যান্ড বা ইওরোপ থেকে যে ক’টি স্টিমার ভারতে এসেছিল, তার মধ্যে এটিই একমাত্র রয়ে গিয়েছে। বাকি সব স্র্যাপ হয়ে গিয়েছে। তাই ঐতিহাসিক ভাবে এই স্টিমারের গুরুত্ব অনেক। তারা সেটাকেই বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে ফের লাইভ করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। 

এই স্টিমার যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ করে চলত গঙ্গা, ব্রক্ষ্মপুত্র, পদ্মা নদীর বুকে। কয়লা পুড়িয়ে উৎপাদিত সেই বাষ্পের সাহায্যে ইঞ্জিন চালানো হত। এখনও সেই ইঞ্জিন রয়েছে। তবে, জানা গিয়েছে যে কয়লার বদলে আপাতত ডিজেল দিয়ে চলবে এই প্যাডেল স্টিমারটি।

এই স্টিমারে পুরনো ঐতিহ্য মেনেই দু’দিকে রয়েছে সেই প্যাডেল যা জল কেটে স্টিমারকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বন্দর চেয়ারম্যান বিনীত কুমার এক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে এই স্টিমার সপ্তাহে রোজ চলবে। হেরিটেজ পোর্ট দেখানো হবে। মাসে তিনদিন করে স্টিমার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দরকে দেবে বেসরকারি সংস্থাটি। তারা আশা করছেন যে এই শহরের মানুষ ছাড়াও, দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকদের কাছে এই স্টিমার দারুণ জনপ্রিয় হবে এবং পর্যটনের ক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা গ্রহণ করবে। 

এই স্টিমারটি ঐতিহ্য হওয়া ছাড়াও নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করার মতন ব্যবস্থা রয়েছে। এক বিশাল ডেক রয়েছে যা ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গ্লাস অডিটোরিয়াম আছে৷

বন্দর আধিকারিকরা মতে, এই স্টিমারের মিউজিয়াম না দেখলে ভারতীয় জলপথের ইতিহাস অজানা থেকে যাবে সবার মধ্যে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...