পুণ্যস্নানের জন্য এখন থেকে আর সাগরের উদ্দেশ যাত্রা করতে হবে না। একেবারে নিজের ঘরে বসেই এই পুণ্য অর্জনের সুযোগ এবার হাতের মুঠোয় আসতে চলেছে। সামনেই আসছে গঙ্গাসাগর মেলা। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এবং সাধু-সন্ন্যাসিদের জমায়েত হবে। কথায় আছে ‘সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার’। তাই স্বভাবতই সাগরযাত্রার জন্য প্রতিবছরই মানুষের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। তবে অনেকের পক্ষেই এই যাত্রা সম্ভব হয় না। তবে মনে ষোলআনা ইচ্ছে তো থাকেই। তাই সেইসব মানুষের কথা ভেবেই সাগরের পবিত্র জল তাঁদের নাগালের মধ্যে পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসন একটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে।
এই উদ্দেশ্যে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করছে জেলা প্রশাসন। আর সেখানে আবেদন করলেই জল পৌঁছে যাবে বাড়িতে। শুক্রবার আলিপুরে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানান জেলাশাসক পি উলগানাথন।এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ই-স্নান। তাই এবার থেকে ই-ওয়েডিং, ই-আরতি, ই-অঞ্জলির মতো এবার থেকে ই-স্নান-এর সঙ্গেও মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। যদিও এখনও পর্যন্ত এই ব্যবস্থা সাগরস্নানের জন্যই হয়েছে।প্রশাসনের কর্তাদের আশা, এই নতুন উদ্যোগ পুণ্যার্থীদের মধ্যে ভাল সাড়া ফেলবে। দেশের বিভিন্ন মন্দিরে এই ব্যবস্থা চালু থাকলেও এই প্রথম গঙ্গাসাগর মেলায় এই ই-স্নান চালু হতে চলেছে।
জেলাশাসক জানিয়েছেন যে, বাড়িতে বসে পুণ্যস্নানের জন্য গঙ্গাজল পেতে হলে প্রশাসনের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হবে। তারপর ক্যুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বাড়িতে গঙ্গাজল পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। জেলা প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে যে, প্রশাসনের তরফ থেকে চেষ্টা করা হবে, যাঁরা আবেদন করবেন, তাঁদের সবার কাছেই এই জল যাতে পৌঁছে দেওয়া যায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, পিতলের কমণ্ডুলে জল ভরে ব্যাগে ভরে লাল সিঁদুর দিয়ে তা পাঠানো হবে পুণ্যার্থীদের বাড়িতে। যাঁরা গঙ্গাস্নানের পুণ্য অর্জন করতে চান, তাঁদের জন্য আরও একটি আনন্দের খবর হল যে, জলের জন্য আলাদা কোনও টাকা তাঁদের দিতে হবে না। যিনি জল নেবেন, তাঁকে শুধু ক্যুরিয়ারের খরচটা মেটাতে হবে। সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ক্যুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে এ ব্যাপারে কথাবার্তাও হয়েছে। কিন্তু কতজন মানুষের কাছে এই জল পৌঁছনো সম্ভব, বা ক্যুরিয়ারের জন্য কত খরচ হতে পারে, সে ব্যপারে এখনই কোনও সঠিক তথ্য দিতে পারেননি প্রশাসনের কর্তারা।
এছাড়াও মেলা সফল করতে বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন জেলাশাসক। যেমন- ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা ভেসেল চালু থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ১২ হাজার সিসি ক্যামেরা ও ১২টি ড্রোনের মাধ্যমে গঙ্গাসাগর মেলায় নজরদারি চালানো হবে। পাশাপাশি জেলাশাসক জা্নিয়েছেন যে, গঙ্গাসাগর মেলায় এসে কোনও তীর্থযাত্রীর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে তাঁর জন্য ৫ লক্ষ টাকা বিমার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
তাই ‘সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার’ এই প্রবাদ বাস্তবে রূপায়িত করতে, গঙ্গাসাগরে যেতে অপারগদের আর কোনও চিন্তাই রইল না। ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো’র মতো হলেও মনকে বোঝানো যাবে ‘এ জীবনে পুণ্যস্নান সম্ভব হল’। যতই তা ই-স্নান হোক না কেন। তাছাড়া এখন তো সব 'ই’-এরই যুগ। যেমন যুগে যেমন হাওয়া।