রেসের মাঠ থেকে রাজপ্রাসাদ- নিজাম প্যালেস কলকাতার বুকে এক আর্মেনিয়ান রহস্য

২৩৪/৪ আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর রোডের নিজাম প্যালেস আসলে কোন রাজপ্রাসাদ ছিল না। বরং এটির সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে কলকাতার রেস ও এক আর্মেনিয়ান ভদ্রলোক গলস্টনের কথা। হায়দ্রাবাদের নিজামকে কে না চেনে। নিজামের মন্ত্রী সালার জং-এর দুর্লভ শিল্প সংসদের খ্যাতি জগৎ-জোড়া। হায়দ্রাবাদের সালার জং মিউজিয়ামের হাজার হাজার শিল্পবস্তুর মধ্যে সেরা আকর্ষণ ভাস্কর্য। যার নাম ‘অবগুণ্ঠিতা’। অবগুন্ঠনের আড়ালে নারীর অসামান্য রূপ ও বৈভব এবং সৌন্দর্যই এই ভাস্কর্যের মূল কথা। এই অবগুন্ঠিতার  সঙ্গে নিজাম প‍্যালেসের একটা অদ্ভুত সাযুজ্য রয়েছে। এই প্যালেস আসলে যিনি তৈরি করিয়েছিলেন তার নাম কোথাও পাওয়া যায় না। তিনিও আড়ালেই ঢাকা পড়ে গেছেন। কলকাতার নিজাম প্যালেস আসলে তৈরি করিয়েছিলেন এক আর্মেনিয়ান ভদ্রলোক। তিনি রেসের ঘোড়ার ব্যবসা করতেন। বিদেশ থেকে বাছাই করা সব ঘোড়া এনে রেসের মাঠে দৌড় করাতেন। জমজমাট ব্যবসা ছিল।

যে সময়ের কথা আলোচনা করা হচ্ছে, তখন কলকাতার রেস ও গলস্টনের নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে যায়। তবে যথারীতি এই ঘোড়দৌড় থেমেছিল একসময়। গলস্টনের তৈরি করা বাড়ি কিনে নিয়েছিলেন হায়দ্রাবাদের কোন এক নিজাম। সেই থেকে বাড়িটির নাম হয় নিজাম পালেস। গলস্টোন বিস্তৃতির অন্ধকারে হারিয়ে যায়। হায়দ্রাবাদের কোন নিজাম বাড়িটি কিনেছিলেন তা আজ অনেক নথিপত্রের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে।

Nizam Palace Kolkata

নিজাম প্যালেসের জানালায় গলস্টনের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে তৈরি কিছু সুন্দর মনোগ্রাম কাচে দেখা যায়। সেই সময় আর্মেনিয়ান কায়দায় গলস্টন জানলায় স্টোন্ড গ্লাস ব্যবহার করেছিলেন। উনবিংশ শতকের প্রথম দিকে বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল। তিন তলা বাড়ি। মোট পাঁচটি গম্বুজ ছিল বাড়িতে। উত্তরে গাড়ি বারান্দা দিয়ে ঢুকে কয়েক ধাপ সিঁড়ি উঠে বারান্দা। সেখানেই মার্বেল পাথরের থাম। গাড়ি বারান্দার সামনেই আছে একটা বিশাল ফোয়ারা।

উত্তরের বারান্দা দিয়ে ঢুকে সামনের বড় ঘরটির মেঝে অসাধারণ। বিশেষ নকশা তোলা হয়েছিল মেঝেতে। চারপাশে ফুল, লতাপাতার অলংকরণ। সেই অলংকরণ অন্য অনেক অলংকরণ-এর থেকেই আলাদা।

পঞ্চাশের দশকে সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করে। তারপর থেকে এই বাড়িতেই সরকারের বিভিন্ন অফিস ব্যবহৃত হচ্ছে।

২৩৪/৪ নম্বর জগদীশচন্দ্র বসু রোডের বাড়ির নিচের তলায় সিপিডাব্লিউডির পি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিস। এছাড়াও বহু অফিস ঘর রয়েছে এই নিজাম প্যালেসে। সারাদিন মানুষ খলবল করে।

এই বাড়িটির দুটি উল্লেখযোগ্য বিষয় যা হলো বাড়ির জানালার ফ্রেন্ডগুলি সিসের এবং জানলার সানসেট গুলি সাজানো হয়েছে প্লাস্টারে তৈরি মুখ দিয়ে। জনশ্রুতি রয়েছে এই মুখ নাকি গলস্টোনের।

নিজাম প‍্যালেসে রয়েছে বিশাল বাগান। সংস্কার করার পর বেশ কয়েকটি অফিস বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে এই চত্বরে । কয়েক বছর আগেও এখানে ডাক বিভাগের আঞ্চলিক অফিস ছিল। আর্মির বেশ কয়েকটি শাখার অফিস ও এখানে ছিল। এই অফিস গুলির স্থানান্তর হয়েছে পরবর্তীকালে। তবুও ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে কলকাতার বুকে নিজাম প্যালেস অস্তিত্ব মনে রাখার মত।

তথ্যসূত্র:- ক্যালকাটা থেকে কলকাতা- গৌতম বসু মল্লিক

বনেদি কলকাতার ঘরবাড়ি:- দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...