কলকাতার চিরকালীন মোহ ‘ফাতিমা রশিদ ’

৮ নম্বর ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিট। কলকাতার আর পাঁচটা পুরনো এলাকার সঙ্গে এ রাস্তার বিশেষ কোনও তফাত নেই। টান নেই পথচলতি মানুষের কাছেই। কিন্তু ভারতীয় হিন্দি ছবির গবেষককে খোঁজ করতেই হবে পুরনো কলকাতার এই ঠিকানা।

কারণ এই ঠিকানাতেই যে জীবন শুরুর বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন ফাতিমা রশিদ ।

ভাবছেন তো ‘ফাতিমা রশিদ ’ কে?

ফাতিমা রশিদ  হারিয়ে গিয়েছেন বহুবছর আগেই। ইতিহাসের পাতায় কিন্তু এই নামের একদা মালকিন ভারতীয় ছবির এক অধ্যায়। ফাতিমা রশিদ  ওরফে নার্গিস। শহর কলকাতার চিরকালীন ‘অবসেশন’।

উত্তর-কলকাতার ৮ নম্বর মিরর স্টিট্রের এই বাড়িটি তখন জদ্দনবাই-এর হাভেলি। এলাহাবাদের নামকরা গাইয়ে তিনি। সন্ধ্যে হলেই তাঁর কণ্ঠের মেহেক ছড়িয়ে পড়ত। শ্রোতাদের আসা-যাওয়ায় গমগম করত হাভেলি।

জর্দনবাঈ-এর মেয়ে ফাতিমা রশিদ । এই বাড়িতেই তার জন্ম। ১৯২৯-এর ১ জুন।  পরে জদ্দনবাই সকন্যা বোম্বাই পাড়ি দেন।

ফতিমা রশিদের বোম্বাই জীবন ছিল একেবারে আলাদা। ছোট থেকে চোখ টেনে নেওয়া রূপ।

nargis1

কিন্তু ছোটবেলায় ছিলেন একেবারেই ‘টমবয়’ বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। সাঁতারে দুরন্ত।  দুই ভাই আনোয়ার আর আখতার হুসেনের সঙ্গে চুটিয়ে চলত ক্রিকেট। গলি ফুটবল। তখন দেখে বোঝার উপায় ছিল না আর কয়েক বছর পরে এই মেয়ের নেশা-চোখেই ধরা দেবে গোটা দেশ।   

পর্দায় তিনি আসা মানেই এক রাশ কুয়াশা সরিয়ে রোদ্দুর নেমে আসা। সাদা-কালো স্ক্রিন আলো করে শুধুই এলিগেন্স। বিপরীতে যেই থাক শুধুমাত্র তাঁকেই দেখবে দর্শক। এমন নার্গিসীটান।

বহুদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে ভারতীয় ছবি মানেই ছিল নার্গিস।

নার্গিসের পর্দা জীবনের শুরু তিরিশের দশকে। ছবির নাম ‘তলাশ-ই-হক’। শিশু শিল্পী। ছবির টাইটেল কার্ডে ফাতিমা রশিদ  নাম বদলে ‘বেবি নার্গিস’।

তলাশ-ই-হক থেকে ‘মাদার ইন্ডিয়া’- মাঝখানে বিপদ- বিপর্যয় কম আসেনি। তিনি কিন্তু একই থেকেছেন। ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবিতে অভিনয়ের সময় নার্গিস তখন ২৮। কিন্তু রাধার ভূমিকায় তাঁর অভিনয় মন জিতে নিয়েছিল সব ধরনের ছবি সমালোচকদের। এই ছবির পরেই সহঅভিনেতা সুনীল দত্তের সঙ্গে পরিনয় হয় নার্গিসের।

nargis2

নার্গিস চিরকালই ব্যক্তিগত জীবনে খোলামেলা স্বভাবের মানুষ। রান্না করতে খুব ভালবাসতেন। বিয়ের পর রান্নার ক্লাসে যেতেন। বাড়ির অনুষ্ঠানে তাঁর হাতের রান্না করা ‘মটকা গোস্ত’ সবসময় অতিথিদের প্রিয় আকর্ষণ।

কথা বলতে ভালবাসতেন। প্রিয় সঙ্গীদের সঙ্গে অকাজের কথা। মজার আড্ডায় কেটে যেত দিনের অনেকটা সময়। বাড়ির টেলিফোন থেকে হাত সরত না নার্গিসের।

প্রথম জীবনের রক্তাক্ত স্মৃতি এভাবেই ধুয়ে দিয়েছিলেন নতুনের আনন্দধারায়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...