কিংবদন্তি শল্যচিকিৎসক ডঃ ললিত মোহন

কবি তরু দত্ত এবং তাঁর পরিবার ছাড়াও আরেক প্রখ্যাত ব্যক্তি মানিকতলা খ্রিষ্টান সেমেট্রিতে নিঃশব্দে শায়িত রয়েছেন। ভারতবর্ষের প্রথম শল্যচিকিৎসার অধ্যাপক ডঃ ললিত মোহন ব্যানার্জি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের সমসাময়িক এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন ডঃ ললিত মোহন ব্যানার্জি।

Lalit1

১৮৮০ সালে ২৩ মার্চ এক বাঙালি খ্রিষ্টান পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। বাবা ছিলেন রাওয়ালপিন্ডি মিশনারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সেই সূত্রে তাঁর ছোটবেলা কেটেছে রাওয়ালপিন্ডিতে। এছাড়া বারাণসীতেও তিনি কিছুকাল ছিলেন।

১৯০৪ সালে মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিএ পাশ করেন। এরপর মাস্টার ডিগ্রীতে ভর্তি হন। ১৯১৩ সালে সার্জারিতে মাস্টার ডিগ্রী সম্পূর্ণ হয়। এফআরসিএস করার জন্য ইংল্যান্ড যান।

Lalit2

সেখান থেকে ১৯১৫ সালে এফআরসিএস ডিগ্রী নিয়ে ফিরে আসেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আর.জি.কর মেডিক্যাল হাসপাতালে সার্জারির অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন।

১৯৪১ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শরীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে শান্তিনিকেতন থেকে জোরাসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। গুরুদেবের স্বাস্থ্য আরও খারাপ হলে ডঃ ললিত মোহনের তত্ত্বাবধানে তাঁর শল্যচিকিৎসা সম্পন্ন করা হয়েছিল।

Lalit3

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রেঙ্গুন থেকে ফিরে এলেন। থাকতেন হাওড়ার বাজে শিবপুরে। এই সময় তিনি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছিলেন। এদিকে তাঁর জেদ ব্রিটিশের অধীন কোন নার্সিংহোম বা ডাক্তারের কাছে তিনি কোন রকম চিকিৎসা করাবেন না। তখন ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ডঃ ললিত মোহনের কাছে তাঁকে পাঠান। ভর্তি হন ৪, ভিক্টোরিয়া টেরেসে (৮৩ পার্ক স্ট্রিট)। অবশেষে শরৎচন্দ্র তাঁর কাছে অপারেশন করতে সম্মত হন এবং সেটা ভালোভাবে সম্পন্ন হয়।

"অ্যাসোসিয়েশন অফ সার্জেনস্ অফ ইন্ডিয়া"র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ডঃ ললিত মোহন ব্যানার্জি। ১৯৪১-৪২ সালে প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন। মেডিসিনে অবদানের জন্য ১৯৫৫ সালে তাঁকে "পদ্ম ভূষণ" সম্মানে সম্মানিত করা হয়। শল্যচিকিৎসার দিকপাল ডঃ ললিত মোহন ব্যানার্জি আজ অবহেলায় রয়েছেন মানিকতলা খ্রিষ্টান সেমেট্রিতে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...