বন্দুকে বাঘ শিকার করেছিলেন কোচবিহারের রাজকন্যা

মগজ, হৃদয়, আর রূপ। এই তিনের অপরূপ বৈভব। কোচবিহারের রাজ অন্তঃপুরে জন্ম হয়েছিল এক আলাদা এলিগেন্স-এর। পৃথিবী তাঁকে চিনেছিল রাজমাতা গায়েত্রী দেবী হিসেবে। বাবা জিতেন্দ্র নারায়ণ ছিলেন কোচবিহারের মহারাজ। মা ইন্দিরা রাজে ভদোদরার রাজকন্যা। ছেলে মেয়েদের বেশ কড়া হাতে মানুষ করেছিলেন তিনি। গায়ত্রী দেবীর জন্ম লন্ডনে। ১৯১৯ সালের ২৩ মে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ঠিক এক বছর পর।

গায়েত্রী দেবীর ঠাকুমা ব্রাহ্ম আন্দোলনের অন্যতম নেতা কেশব চন্দ্র সেনের মেয়ে। ছোট থেকেই একেবারে পাক্কা সাহেবী কায়দায় মানুষ। স্কুল জীবনের শুরু লন্ডনে। পরে কোচবিহার রাজমাতা ভাবলেন কিছুটা প্রাচ্য ধারাও থাক মেয়ের মধ্যে। পাঠিয়ে দিলেন গুরুদেবের আশ্রম শান্তিনিকেতনে। সেখানের পাঠ শেষ করে সোজা লন্ডন। তারপর সুইজারল্যান্ড।

Gayatri Devi Jaipur

ড্রাইভিং তাঁর প্রাণ। ভালোবাসতেন শিকার করতে। বাঘ মেরেছিলেন বন্দুকে। ঘোড়া ছোটাতেন বাতাসের বেগে। পোলো খেলোয়াড় হিসেবেও বেশ দক্ষ। আর তাঁর সৌন্দর্য! গোটা পৃথিবী। আবর্তিত হত সেই জাদুতে। কিংবদন্তি হয়ে আছে তার খ্যাতি। পোলো খেলার সূত্রেই প্রথম কলকাতায় আসা। প্রথম প্রেমও পোলো খেলতে গিয়েই।

বছর আঠারোর গায়েত্রী প্রেমে পড়েছিলেন দাদার বন্ধু জয়পুরের মহারাজ দ্বিতীয় সাওয়াই মান সিং-এর। ২০ বছর বয়সে বিয়ে করেন তাঁকেই। বয়সের ব্যবধান সাত বছর। সাওয়াই মান সিংয়ের তৃতীয় রানী হয়ে প্রবেশ করেন জয়পুরের রাজ অন্দরে। তৃতীয় হয়েও রাজ প্রশাসনে তাঁর প্রভাব ছিল সিংহীর মতো। পর্দা প্রথা মানতেন না। রাজস্থানী নারী শিক্ষাকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন কার্যত একাই। বিধি নিষেধের তোয়াক্কা তিনি করতেন না।

একরোখা জেদি মনোভাব। কাজে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্র ছাড়া বাইরে থেকে দেখলে বিশেষ বোঝা যেত না। এক সময় পা রাখেন রাজনীতিতে। সে পথও চড়াই উৎরাই-এ ভরা। তিনি কিন্তু লড়াই করেছেন। রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটেছে। লোপ পেয়েছে রাজপ্রতাপ। কিন্তু গায়েত্রী দেবী আজও ভারতীয় হৃদয়ের ‘রাজমাতা’।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...