প্রাণের প্রতীক শঙ্খ

সেই কত দিন আগে সলিল চৌধুরী একটা চিরদিনের গান লিখে গিয়েছিলেন..."আয় রে ছুটে আয় পুজোর গন্ধ এসেছে...".
আশ্বিন মাস যেই শুরু হয়, কেমন যেন সব পাল্টে যেতে শুরু করে। বাতাসের স্যাঁৎস্যাঁতে আর্দ্র ভাব কমতে থাকে, নীল আকাশে তুলোর মতো সাদা মেঘের দল ঘুরে বেড়াতে শুরু করে। গাছ ভর্তি হয়ে ফোটে শিউলি আর টগর। "কাশবন ফুলে ফুলে সাদা"... অকারণের খুশিতেই মন মেতে ওঠে...আর.... আর হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে আসে সেই অমোঘ ঘ্রাণ.... পুজোর গন্ধ।

.."দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী মহিষাসুরমর্দিনী জয় মা দুর্গে"... দুর্গা অর্থাৎ যিনি দুর্গতি বা সঙ্কট দূর করেন। দশভুজা মা দুর্গা তো আমাদের দুর্গতি নাশ করতে এই শরৎকালে চলে আসেন মর্ত্যধামে। দশ হাতে দশ অস্ত্র নিয়ে বধ করেন অসুরকে। এ হলো অশুভের বিরুদ্ধে শুভর সংগ্ৰাম। পুরাণমতে এই লড়াইয়ে মা'র দশ হাতে যে দশ অস্ত্র থাকে সেগুলো কিন্তু একেকটা এক একজন দেবতা তাঁকে দিয়েছিলেন। আজ আলোচনা করবো মা দুর্গার হাতে থাকা "শঙ্খ" নিয়ে।

শাস্ত্রে বিভিন্ন রকমের দুর্গা দেবীর উল্লেখ থাকলেও সনাতনধর্মী বাঙালিরা যে মূর্তির পুজো করে থাকে তা হলো মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা। এই দেবীর বাঁ হাতে থাকে শঙ্খ। পুরাণ মতে শঙ্খ থেকে যে শব্দের উৎপত্তি হয় তার থেকেই জীবজগতের সমস্ত প্রাণের সৃষ্টি। সৃষ্টির প্রতীক হলো এই শঙ্খ। সমুদ্রের দেবতা বরুণদেব দেবীকে প্রদান করেছিলেন শঙ্খ। সমস্ত জীবজগতের স্পন্দন স্বরূপ এই অস্ত্র দেবীর হাতে সজ্জিত থাকে। শাঁখ জাগরণের প্রতীক। যুদ্ধের সময়ের শব্দ জাগরণী শক্তি হিসেবে কাজ করে।

হিন্দু ধর্মের মানুষদের কাছে ও শঙ্খ বা শাঁখের আওয়াজকে অত‌্যন্ত পবিত্র মনে করা হয়। ঘরের প্রতিদিনের দেবার্চ্চণার সময়েও যে তিনবার শঙ্খধ্বনি করা হয়, এই শাঁখের আওয়াজ দ্বারা ব্রহ্মা বিষ্ণু এবং মহেশ্বরকে আহ্বান জানানো হয়। পুরাণ মতে সৃষ্টির আদিতে যখন সমগ্ৰ চরাচর জলমগ্ন ছিল তখন শ্রীবিষ্ণু সমুদ্রের নিচে শাঁখের আধারে অবস্থান করছিলেন। দেবতাদের প্রার্থনায় তিনি প্রথম শঙ্খ নিয়ে উঠে আসেন।
এর একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। এই পৃথিবীতে প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল জলে। তাই দেবী জগদীশ্বরীকে যদি আমরা পঞ্চভূতের একত্রিত শক্তিস্বরূপা বলে মনে করি তাহলে সেই প্রাণশক্তির প্রতীক রূপেই দেবীর হাতে শঙ্খ বিরাজ করে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...