ফুটবলকে দিয়ে তিনি তৈরি করেন কবিতা, এমনই এলেম লিওর

সবাই কবি নয় - কেউ কেউ কবি। মেসি তেমনই এক কবি। ১৬ নভেম্বর ২০০৩, হোসে মরিনহো তখন পর্তুগালের ক্লাব এফসি পোর্তোর কোচের দায়িত্বরত। তাঁর দলের বিপক্ষে বার্সেলোনা তখন খেলছে এক প্রীতি ম্যাচ। ২-০ গোলে পিছিয়ে অতিথি দল বার্সেলোনা। পরিবর্তন এলো ১৪ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামল খর্বকায় ১৬ বছরের এক ছোকরা। তারপর কী হল?

তারপর থেকে ইতিহাস ওলোটপালোট হল। বিশ্ব ফুটবল নড়েচড়ে বসে মুগ্ধ দৃষ্টিতে অপলক চেয়ে চেয়ে উপভোগ করতে রইল সেই ক্ষুদে ফুটবলারের অপার্থিব ফুটবলীয় কারুকার্য। বাংলার নকশি কাঁথার থেকেও সুন্দর শৈলী কিংবা রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের মতো আবেদন জাগানিয়া। ছেলেটা একের পর এক বিশ্ব রেকর্ড গড়ে নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলেন ভিনগ্রহের ফুটবলারের ট্যাগ। ভিনগ্রহের সেই ফুটবলের জাদুকর আর কেউ নন লিওনেল মেসি।

FotoJet (7)

দশবার লা লিগা শিরোপার ট্রফিটি ছুঁয়ে বালক থেকে যুবক বয়সের শেষের দিকে আসা অবধি মেসির ক্লাব ক্যারিয়ারের গোলের সংখ্যা ৬৮৭। স্পেনের ঘরোয়া লিগের সবকিছু জিতেছেন বেশ কয়েকবার করেই, তাঁর সাথে ইউরোপিয় ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব চ্যাম্পিয়ন্স লিগও জিতেছেন পাঁচবার। লিওনেল মেসির ফুটবল ক্যারিয়ারের আক্ষেপ হয়ে থাকত একটি আন্তর্জাতিক ট্রফি। সেটাও মিটেছে। তাও পর পর দুটো। কোপা এবং সদ্য জেতা ফিনালিজমা। অপেক্ষা শুধু বিশ্বকাপের। যা , ২০১৪তে খুব কাছ থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল।

 সময়ের টানে গাছের পাতারা ফিকে হয়ে যায়। অজস্র টাকার মোড়কে রচিত লোকমুখে অহোরাত্র চর্চিত দেওয়ালে নোনা ধরে। তরুণ যুবক বৃদ্ধ হয়ে ওঠে, অপরপক্ষে সবার কাছে তাড়া খাওয়া শুঁয়োপোকাও বর্ণময় প্রজাপতি হয়ে ওঠে। জীবন নামক খেলার এমনই মাহাত্ম্য।

এরই মাঝে লুকিয়ে থাকে কিছুজনের গিটার হয়ে ওঠার উপাখ্যান। সেই গিটারের গায়ে খেলা করে গিটারের তারসমূহ। নিরীহ তারের উপর আঙুলের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফলস্বরূপ বিভিন্ন ধ্বনির, সুরের উত্থিতি ঘটে সমগ্র পরিবেশে। সুরের আঁচ পায় সুবিস্তৃত গ্যালারি। সবুজ গালিচা এবং তার উপরের শিশিরকণা। সুর ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ধরিত্রীতে।

ঠিক এ'রকমই কোনো গিটারের মতো থেকে গিয়েছেন আর্জেন্টিনার সোনালী দাড়িওয়ালা এক ভদ্রলোক। ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতার বলে পেরিয়ে গিয়েছেন বুঁফো, ক্যাসিয়াস, ডি-জিয়া প্রমুখকে। সোনায় মোড়া বাঁ পা থেকে আঘাতপ্রাপ্ত বলের গতিতে বার্সেলোনা ভেসে গিয়েছিল ট্রফির বন্যাতে। ফুটবল রোম্যান্টিসিজমের সমস্ত প্রকার সুর ছড়িয়ে দিয়েছেন আট থেকে আশির মধ্যে। তিনি লিও মেসি।

খুশিতে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে পড়ে এই চরাচরে। কথিত আছে, এগারো বছর বয়সী মেসির কুশলতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ। হাতের কাছে কাগজ না পেয়ে মেসির বাবার সঙ্গে চুক্তি করেন ন্যাপকিন পেপারে। এরপরে বাকিটুকু ইতিহাসের খাতায় উল্লিখিত।

FotoJet (8)

এক একটা বছর অতিক্রান্ত হয় আর পকেট ভরে যায় এক একটা ব্যালন ডি অর-এ! কখনও এক মরসুমে ৯১ গোলের রেকর্ড। অজস্র সব অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। কখনও হয়ে উঠেছেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত। কিংবা নিজের নামে চালু করেছেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, রোগাক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করার স্বার্থে। একজন রোল মডেলই বটে।

গিটারের সেই সুর দ্বিমুখী। কখনও সে প্রেমিক হয়ে উঠে। রোমান্টিক সুর ঝরে পড়ে সমগ্র গা হতে। সেই সুরের ঝর্ণাতে তলিয়ে যায় কোটি কোটি মানুষ। এক লহমায় সেই সুরের সৌন্দর্যকে আগলে নেয় জীবকূল, এমনই তাঁর মহিমা। তিনি এল এম টেন।

দৈহিক উচ্চতা কম ছিল। রিভারপ্লেটের সামর্থ্য ছিল না গ্রোথ হরমোনের অভাবে ভুক্তভোগী সেই বালকের জন্য চিকিৎসার খরচ বহন করা। অথচ সেই বালক কোনও  এক জাদুবলে, ঐশ্বরিক ক্ষমতায় কিংবা বাঁ পায়ের ম্যাজিকে নিজেকে টেনে নিয়ে গেছেন এক অনন্য মাত্রায়, অনন্য উচ্চতায়। তিনি সবার প্রিয় লিওনেল মেসি।

 

 

বিভিন্ন বিষয়ে মনোগ্রাহী ফিচার আর্টিকেলের জন্য আপনার ঠিকানা www.jiyobangla.com

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...