পর্বত পেরিয়ে ভারতে রাজদরবারের ফাস্ট ফুড

গুগলের চাকরী ছেড়ে শিঙাড়ার দোকান। আর সেখান থেকেই লাখপতি। এ কাহিনি কোনও রূপকথার গল্প নয়, চূড়ান্ত বাস্তব। এমন কান্ড ঘটিয়েছিল মুম্বই এর মুনাফ কাপাডিয়া। শিঙাড়ার দোকান দিয়ে শুধু লাখপতি হয়নি, নাম তুলেছিল ফোর্বস-এর ধনী তালিকায়।

 ভারত খাদ্য রসিকের দেশ। এই দেশের মানুষ বিদেশী শাসকের সঙ্গে সম্মুখ সমরে লড়াই করেছে।রক্ত ঝরিয়েছে। শত্রু শাসককে পরাজিত করে দেশ ছাড়া করেছে। কিন্তু ভালোবেসে আপন করে নিয়েছে বিদেশী স্বাদ।   

সেদ্ধ আলু তে নুন, লঙ্কা, মশলা, কাঁচালঙ্কা আর বাদামের টুকরো দিয়ে ময়দার চাদরে মুড়নো। তিন তিন শিঙের বস্তুটাকে ডুবো তেল বা ঘি দিয়ে ভাজা। সোনালী রং ধরলেই সরিয়ে নেওয়া আগুনের তাত থেকে। গায়ের খোল দেখলে মনে হবে শক্ত। কিন্তু ছুঁলেই ঝুরঝুরে। কোণ ভেঙ্গে কামড় দিলেই মুখের ভিতর জেগে ওঠে এক স্বর্গীয় অনুভব। শালপাতায় মোড়া শিঙাড়ার গন্ধে লেগে থাকে বাঙালির রবিবারের সকাল। আড্ডা তর্ক আলোচনায় যার অনিবার্য উপস্থিতি।     

পারসি নাম সনবোশাখ।

একাদশ শতাব্দীতে পারস্যের ঐতিহাসিক আবুল ফজল বুরেসির তারিক-ই-বিহাগি বইতে ‘সামবোসা’র উল্লেখ আছে। যা আসলে বাংলায় শিঙাড়া।

গজনির সুলতানের দরবারে সন্ধের খাবার হিসেবে শিঙাড়া পরিবেশিত হত।

ময়দার কোটের ভিতর মাংসের টুকরো, বাদাম, শুকনো ফলের পুর দেওয়া ভাজা পিঠে জাতীয় পদ।

FotoJet - 2019-09-13T202113.751

কিন্তু শিঙাড়ার প্রকৃত ঐতিহাসিক সফর শুরু করে  ভারতে আসার পর। এদেশে ঠিক কবে থেকে শিঙাড়া যাত্রা শুরু করল তার বিশদ তথ্য বিশেষ পাওয়া যায় না।

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজদরবারেও শিঙাড়া পরিবেশন হত। ইবানবতুতাও চেখে ছিলেন শিঙাড়া। তার নাম তখন ‘ সামবুসা’।

 

 জন্ম থেকেই শিঙাড়ার তিন শিং। যে দেশেই গিয়েছে তার আকারের পরিবর্তন ঘটলেও শিং-এর পরিবর্তন ঘটেনি।

কুলিনারি বিশারদরা শিঙাড়াকে পৃথিবীর প্রথম ‘ফাস্টফুড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

ভারতে শিঙাড়া কিন্তু মাংস বা শুকনো ফলের ব্যবহার দেখা যায় না। আলুর পুর, সঙ্গে বাদামের টুকরো। এভাবেই সে আট থেকে আশির মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

১৩ শতাব্দীতে ভারতের মানুষ পর্তুগিজ বণিকদের কাছ থেকে রান্নায় আলুর ব্যবহার শিখেছিল। ভারতে মাংস বা শুকনো ফল সাধারন মানুষের কাছে খুব সহজলভ্য ছিল না। তাই তাঁরা এভাবেই রাজ দরবারের পদটিকে নিজেদের মতো করে নিয়েছিল।

দিল্লিতে বিয়ের ভোজ মানে মেনুতে শিঙাড়া থাকবেই। বাঙালি আড্ডা শিঙাড়া ছাড়া ভাবাই যায় না। গুজরাটে জনপ্রিয় কুচি শিঙাড়া। পাঞ্জাবী শিঙাড়ায় পনির ছাড়া পাঞ্জাবী শিঙাড়া জমে না।

আবার নুডলস ভরা চাউমিন শিঙাড়াও বাজারে মিলছে আজকাল। পরীক্ষা-নিরিক্ষা জারি থাকলেও আলুর শিঙাড়ার কাছে হার মেনে নেয় সবাই।

বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ছড়িয়ে পড়েছে শিঙাড়া। ভারতে তার নাম সামোসা। কিন্তু নাম এবং চেহারা কিঞ্চিৎ বদলও ঘটেছিল স্থানে স্থানে।

FotoJet - 2019-09-13T202038.646

শ্যাম্পু, বাংলো, বারান্দা আর পাজামার মত শিঙাড়াকে আপন করে নিয়েছিল ব্রিটিশ শাসকরা।

আমির খসরুর রচনাতে শিঙাড়ার কথা আছে। সেখানে অবশ্য শিঙাড়াকে মাংসের পুরভরা ভাজা খাবার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল।

বঙ্গের শিঙাড়ায় আলুর পুর চলে। শীতকাল এলেই বদলে যায় তার চরিত্র। তখন আলুর সঙ্গে ফুলকপি আর কড়াইশুঁটির জুটি। হ্যাংলা বাঙালি সারা বছর অপেক্ষা করে ফুলকপির শিঙাড়ার জন্য।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...