এই শীতেই ঘুরে আসুন বাংলার ফুলের উপত্যকা ক্ষীরাই গ্রামে

মাঠের পর মাঠ জুড়ে যে দিকে চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। চারদিকে রঙের বান। উড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছি। মেঠো পথের ধারে ধারে ফুলের মেলা। কান পাতলে ‘ফুল নেবে গো’ বলে ডাক শোনা যায় ফুলবালিকাদের। এ কোনও স্বপ্নরাজ্যের কথা নয়, এ আমাদের বাংলারই ছবি।

গত তিন-চার বছর ধরে শীতকালে উৎসাহী মানুষের অবশ্য-গন্তব্যের তালিকায় ঢুকে পড়েছে ক্ষীরাই গ্রাম। পূর্ব মেদিনীপুরে লালমাটির অখ্যাত গ্রাম ক্ষীরাই ফুলের টানেই নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে পর্যটক। দিন দিন বেড়েই চলেছে ক্ষীরাই গ্রামের জনপ্রিয়তা।

পূর্ব মেদিনীরের তমলুক, কোলাঘাট, পাঁশকুড়া ফুল চাষের জন্য জনপ্রিয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল চাষ করা হয়। রাজ্যের সমস্ত বড় ফুল বাজার তো বটেই দেশের নানা প্রান্তেও ফুল পাড়ি দেয় নিয়মিত।

 ক্ষীরাই নদীর নাম থেকে এই স্টেশনের নাম হয় ‘ক্ষীরাই’ তারপর সেটাই হয়ে ওঠে অঞ্চলের নাম। বর্ষা শেষ হলে দুর্গাপুজোর আগে আগে বীজ ছড়ানো হয় জমিতে। নভেম্বরের শেষ থেকে কুঁড়ি ধরে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জমিতে জমিতে চলে ফুলের উৎসব। বড় বড় ইনকা গাঁদা, নানা রঙের চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ বাতাসের গন্ধও বদলে যায়। মোরঝুঁটি, আস্টার, গ্ল্যাডিওলাসও আছে।

পাশকুঁড়ার পরের স্টেশন ক্ষীরাই। হাওড়া থেকে খড়গপুর বা মেদিনীপুর লোকালে চেপে বসলেই হল। সময় লাগবে ঘন্টা দেড়েকের মতো। ক্ষীরাই স্টেশনে নেমে ২০ মিনিট সময় লাগে গ্রামে পৌঁছতে। রেললাইন ধরে পাঁশকুড়ার দিকে প্রায় ২ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। যেতে যেতে পড়বে কংসাবতী। কাঁসাই ব্রিজ পেরলেই পৌঁছে যাওয়া যায় ফুলের রাজ্যে। পাঁশকুড়া স্টেশনে নেমে টোটোও পাওয়া যায়। ট্রেন ছাড়াও দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজ দিয়ে গাড়িতেও যাওয়া যায়। 

নদীর ধারে প্রায় দু’কিলোমিটার জুড়ে ফুলের বন্যা, ক্ষীরাই যাওয়ার আদর্শ সময় ভোরবেলা বা সকালের দিক। কিন্তু দুপুর-বিকেলেও আকর্ষণ কম নয়। ফুলের মেলায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার দৃশ্য সারাজীবন মনে রাখার মতো।

করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে ক্ষীরাইয়ের ফুল বাগানে পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু এখন স্বাভাবিক পৃস্থিতিতে পর্যটকদের কোনও মানা নেই। 

ক্ষীরাই স্টেশন আসার বেশ কয়েকটা স্টেশন আগে থেকেই অনুভব করতে পারবেন ক্ষীরাইকে। না, ফুলের গন্ধে নয়, কিন্তু ফুলের গয়নার উচ্ছ্বাস জানান দেবে কাছাকাছি এসে পড়েছে গন্তব্য। ক্ষীরাই এবং সংলগ্ন গ্রামগুলিতে তৈরী ফুলের গয়না জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্ষীরাইয়ের ফুল বাগানের মতোই। ফুলের মালা, টায়রাতে স্বাগত জানায় পর্যটকদের। কী ভাবছেন একবার ঘুরে াসবেন নাকি? ভিড় প্রচুর, কিন্তু এই দৃশ্য দেখার লোভ থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায় না।

পূর্ব মেদিনীপুরে ক্ষীরাই ছাড়াও দোকান্ডা, হাউড়, পশ্চিম কোল্লা, জাকপুর, মাড়পুর, রাধামোহনপুরও চোখ টানে। ভারতের সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপাদক রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর ও নদিয়া ফুল উৎপাদলে শীর্ষস্থানীয় জেলা।

নদীর উর্বর পলিমাটি পূর্ব মেদিনীপুরকে করে তুলেছে শীতের মরসুমি ফুলের আদর্শ জন্মস্থান।  ক্ষীরাই এবং আশেপাষের অঞ্চল থেকে মাঝরাত থাকতেই ফুল যাত্রা শুরু করে আশেপাষের মার্কেটে। মুম্বই, বেঙ্গালুরু, দিল্লি, হায়দ্রাবাদেও যায়। 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...