পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে কীভাবে পালিত হয় কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী

কলিযুগে শ্রীক্ষেত্র পুরীতে অবস্থান করছেন শ্রীকৃষ্ণ জগন্নাথ রূপে। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। গোটা দেশ মেতে ওঠে উৎসবে। মথুরা, বৃন্দাবন শ্রীকৃষ্ণের জন্ম ও লীলাস্থল। আর শ্রীক্ষেত্রে তিনি ব্রহ্ম।

গোটা দেশের মত পুরীর শ্রী মন্দির জন্মাষ্টমী উৎসবে মেতে ওঠে। তবে অন্যান্য স্থানের তুলনায় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে জন্মাষ্টমী পালনের ধরন একটু আলাদা।

শ্রী বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণ। তাঁকে সর্ব অবতারের মাতা বলা হয়। কিন্তু পুরাণ বলে সব অবতারের সৃষ্টি হয়েছে জগন্নাথের আধারে। সেই কারণেই শ্রীকৃষ্ণের নাভি অংশে জন্ম হয়েছে জগন্নাথের।

দ্বাদশ শতাব্দী থেকেই শ্রী মন্দিরে জন্মাষ্টমী পালনের প্রথা চলে আসছে।

জন্মাষ্টমীর আগের রাতে শুরু হয় উদযাপন। জগন্নাথকে নিবেদন করা হয় ‘জেউদা ভোগ’। প্রসববেদনার কষ্ট লাঘব করার জন্য এক ধরনের পথ্য এটি। যাতে যাতনাহীনভাবে নবজাতকের আগমন ঘটে পৃথিবীতে। ২৪ ঘন্টা পর জগন্নাথ থেকে জন্ম হয় শ্রীকৃষ্ণ আর রামের।

সন্ধ্যা আরতির আগেই এই ভোগ নিবেদন করা।সন্ধ্যে সাতটার সময় শুরু হয় অনুষ্ঠান। জয়-বিজয় দ্বার বন্ধ করে পূজ্যপান্ডা একটি মন্ডল আঁকেন। পাঁচ ধরনের প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে দুই দ্বার রক্ষকের চিত্র আঁকা হয়। সেখানে শাল আর শ্রীপর্ণ কাঠের তৈরী পদ্মাকারের একটি আসনস্থন রাখা হয়। পূজ্যপান্ডা, পতি মহাপাত্র প্রমুখ পুরোহিতরা পূজা নিবেদন করেন। ‘কলস পূজা’ অনুষ্ঠিত হয়। কৃষ্ণের জন্মের পর মুহুর্তের পট আঁকেন চিত্রকর পুরোহিত।রূপোর কলসের ওপর স্থাপন করা হয় সেটি। তারপর প্রতিস্থাপন করা হয় নবগ্রহ। এই সময় ‘পান্তি প্রসাদ’ নিবেদন করা হয় দেবতাদের।

অঙ্গমালা সমাপন হওয়ার পর মহাজন শ্রীকৃষ্ণ মূর্তিকে পদ্মাসনে স্থাপন করেন। দেবকী গর্ভে শ্রীকৃষ্ণের পুজো হয়। এটি তারই প্রতীক। মন্ত্রচ্চারণের মাধ্যমে ধরায় আসেন প্রভু। তারপর হলুদ, চন্দনের জলে তাঁকে স্নান করানো হয়। পীতবাস পরানো হয়। দুধে তৈরী প্রসাদ নিবেদন করা হয় তাঁকে।

তারপর সরস্বতী মন্দিরে তাঁকে পিতা বসুদেবের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রভু এবার যমুনা পাড়ি দেবেন। অগ্রসেনের বেশে এক পূজ্যপান্ডা বসুদেবের থেকে শ্রীকৃষ্ণকে গ্রহণ করেন। তারপর সেখানেই জন্মাষ্টমীর আসল ও অন্তিম পূজা সমাপম হয়। জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণক বিশেষ ‘দেউলা ভোগ’ নিবেদন করা হয়।

 

 

তথ্যসূত্র: Tathya

  

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...