জলের অধীশ্বর জম্বুকেশ্বর শিব কেন অবস্থান করেন সাদা জাম গাছের নীচে?

পঞ্চভূতের দ্বিতীয় ভূত ‘অপ’ বা ‘জল’। জলের অধীশ্বর অপলিঙ্গম জম্বুকেশ্বর শিব। তাঁর অবস্থান তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লি শহরে। জম্বু অর্থাৎ জামগাছের নীচে অবস্থান হওয়ার কারণে শিবের এখানে নাম জম্বুবেশ্বর। তবে এই জামটি সাদা জামগাছ।

IMG-20230809-WA0018

কিন্তু কীভাবে জাম গাছের তলায় এলেন তিনি? সেই কাহিনি জানতে হলে ফিরতে হবে পুরাণ যুগে।

পুরাকালে মাল্যবান আর পুষ্পদন্ত নামে শিবের দুই উপাসক ছিলেন। তাঁরা দুজনেই শৈব হওয়া সত্বেও নিজেদের মধ্যে লেগেই থাকত চুলোচুলি ঝগড়া। একবার মাল্যবান প্রচন্ড রেগে গিয়ে পুষ্পদন্তকে হাতি হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দেন। পুষ্পদন্ত পাল্টা অভিশাপ দেন সেই মুহূর্তেই মাকড়সা হতে হবে মাল্যবানকে।

শিবভক্তের কথা বিফলে যাওয়ার নয়। দুই শৈব্য শাপগ্রস্ত হয়ে জন্ম নিলেন তিরুচিরাপল্লির জামরুল বনে।

জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে যেত কাবেরী নদী। হাতিরূপী পুষ্পদন্ত জঙ্গলেই একটি শিবলিঙ্গ বানিয়ে নদীর জল দিয়ে পুজো করত। আর মাকড়সারূপী মাল্যবান শিবলিঙ্গের ওপর জাল বিস্তার করে রাখত যাতে তার প্রভুর গায়ে গাছের শুকনো পাতা না পড়ে। এদিকে হাতি এসে প্রতিদিন সেই জালকে ধূলোর আস্তরণ ভেবে শুঁড়ে করে সরিয়ে দিত। এই নিয়ে ফের একদিন প্রবল ঝামেলা বাঁধল দুই ভক্তর মধ্যে। ঝগড়া চরমে উঠলে মাকড়সা এক কামড় দিল হাতির শুঁড়ে। এই দেখে শিব স্বয়ং জাম্বুগাছের জঙ্গলে দেখা দিলেন তাঁদের। দুজনেই শাপমুক্ত হল তাঁর আশির্বাদে। সেই থেকে শিব এই স্থানে জম্বুকেশ্বর নামে পরিচিত হন। জায়গাটির নাম হয় থিরু-আনাই-কা।     

‘থিরু’শব্দের অর্থ পবিত্র, আনাই অর্থ ‘হাতি’ আর ‘কা’ জঙ্গল। তা থেকেই এই জম্বুকেশ্বর মন্দিরের নাম হয় ‘থিরুআনাইকাভালাম’।

আরও একটি কাহিনি শোনা যায় মন্দির নিয়ে।

হাতিরূপী পুষ্পদন্তকে হত্যা করার অপরাধে মাল্যবান চোলরাজ কোচেঙ্গট হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাপ থেকে উদ্ধার পেতে জম্বুকেশ্বর মন্দিরসহ ৭০ টি শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

এই মন্দিরে তিন ফুট উঁচু লিঙ্গটি তাম্রবর্ণ শিলার। পার্বতী এখানে অখিলান্দেশ্বরী রূপে অবস্থিত। এই মন্দিরের বিশেষত্ব হল এখানে পার্বতী শিবের শিষ্যা। তিনি গুরুরূপে জম্বুকেশ্বরকে বরণ করেছেন। তাঁর কাছেই শিবজ্ঞানের উপদেশ গ্রহণ করেন। সেই জন্য অখিলান্দেশ্বরী ও জম্বুকেশ্বর এখানে মুখোমুখি। অন্যান্য শিব মন্দিরের মতো এখানে হরপার্বতীর বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় না।

এই মন্দিরে একটি বিশেষ মূর্তি আছে। এই মূর্তিকে বলা হয় একপাদ ত্রিমূর্তি। সেটি এক পা বিশিষ্ট শিবের দেহ থেকে ব্রহ্মা ও বিষ্ণু বেরিয়ে এসেছেন। মূর্তির অর্থ হল ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর উৎপত্তি শিবাংশেই।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...