সোনার কুয়া থেকে আনা ১০৮ কলস জলে স্নান করবেন প্রভু জগন্নাথ

শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলতেন কলিতে জগন্নাথের মহাপ্রসাদ সাক্ষাৎ ব্রহ্ম। কলিযুগে তিনিই জগতের নাথ। তাই তিনি জগন্নাথ। ‘জগন্নাথ’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ‘জগৎ বা ব্রহ্মাণ্ডের প্রভু’। এছাড়াও আছে তাঁর একাধিক নাম। ‘কাল্য’, ‘দারুব্রহ্ম’, ‘চকাক্ষী’, ‘চকাদোলা’ বা ‘চকানয়ন’ নানা নামে তাঁকে ডাকা হয়। প্রভু জগন্নাথ এক আশ্চর্য দেবতা। তাঁর কাছে উচ্চ-নীচ ভেদ নেই। শূদ্র, যবন, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় সব সমান। হিন্দুদের সকল সম্প্রদায়ের দেবতা তিনি। মন্দিরে বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত মিলেছে।

জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা। ভক্তদের বিশ্বাস একবার স্নানযাত্রা মহোৎসব দর্শন করলে সংসারের জাগতিক বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ হয়। ঋষি জৈমিনি বলেছেন যিনি এই স্নানযাত্রা দর্শন করবেন তিনি সমস্ত তীর্থের স্নানের থেকে শতগুণ অধিক ফল লাভ করবে।

 জৈষ্ঠ পূর্ণিমার আগের দিন শ্রীক্ষেত্রের মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা দেবী এবং সুদর্শন দেবকে বেদী থেকে স্নান মণ্ডপে নিয়ে আসা হয়। মণ্ডপ সাজানো হয় ওড়িশার নিজস্ব শিল্প রীতিতে। থাকে তোরণ এবং পতাকা। জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ ফুলসাজে  সাজানো হয়। পুজো- আরতি শেষ হলে  ‘সুনা কুয়া’ নামে সোনার তৈরি এক  কুয়ো থেকে জল আনা হয়।

jagannath snan

জল আনার সময় পুরোহিতরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন। ১০৮ টি স্বর্ণ পাত্রে জল ভরা হয়। সেই জলেই করা হয় অভিষেক। অভিষেকের সময় বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ, কীর্তন এবং শঙ্খ বাজানো হয়। জগন্নাথ-বলরামকে গজ বেশে সাজানো হয়। সুভদ্রা দেবীকে সাজানো হয় পদ্ম সাজে। ভক্তেরা এই সময় জগন্নাথকে দর্শন করতে আসেন।

 স্নান যাত্রা উৎসবের পর  দারুদেব সাধারণের দর্শনের বাইরে থাকেন। মন্দিরে কোনও অনুষ্ঠান হয় না। বলা হয় জগন্নাথ দেবের জ্বর হয়েছে। তাই তিনি বিশ্রামে থাকেন।   ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাদেবীকে রতন বেদী নামে এক বিশেষ বেদীতে রাখা হয়। এই সময়কে বলা হয় অনাবাসর কাল, মানে পূজা করার জন্য অযোগ্য সময়। এই সময় ভক্তেরা ব্রহ্মগিরিতে অলরনাথ মন্দিরে যান। তারা বিশ্বাস করেন, অনসর পর্যায়ে জগন্নাথ অলরনাথ রূপে অবস্থান করেন। কথিত আছে, রাজবৈদ্যের আয়ুর্বৈদিক 'পাঁচন' খেয়ে এক পক্ষকালের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

স্নান করানোর ফলে বিগ্রহ সমূহ বিবর্ণ হয়ে যায়। এই ১৫ দিনে জগন্নাথ দেবকে আগের সাজে ফিরিয়ে আনা হয়।পনেরো দিন পর নেত্রউৎসবে প্রভু জগন্নাথের নয়ন উন্মেলিত হয়। ষোলতম দিনে দারুদেব আবার সবার দর্শনের জন্য সামনে আসেন। রাজবেশে সাজানো হয় তাঁকে। এই দিনেই রথ  যাত্রা।

স্নান যাত্রা নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত আছে

জ্যৈষ্ঠমাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্বয়ম্ভ‌ু মনুর ‌যজ্ঞের প্রভাবে জগন্নাথদেব আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই এই তিথিকে জগন্নাথদেবের জন্মদিন হিসেবে পালন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মনু। সেই জন্মদিন উপলক্ষ্যেই এই বিশেষ স্নান উৎসব পালিত হয়।

আবার স্কন্দ পুরাণ অনুসারে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই স্নান যাত্রা উৎসব শুরু হয়। স্নানযাত্রাকে তাই জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি বা জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...