কাঠের পা নিয়ে নাছোড় জেদে আজ এভারেস্ট বিজয়িনী অরুণিমা

লখনউ-এর মেয়ে। ছোট থেকে স্বপ্নের মায়াজাল বুনতে ভালোবাসত সে। ভলিবল বরাবর তাকে আকর্ষণ করেছে। নিজের ভালোবাসার পথে এগিয়ে সে ভলিবল খেলাকেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেয়। তবে এছাড়াও অরুণিমার চোখে ছিল আরেক স্বপ্ন। পাহাড় চড়ার স্বপ্ন। উঁচু পাহাড়গুলো যখন আকাশকে ছুঁয়ে দিয়ে তার অপূর্ব সৌন্দর্য নিয়ে পৃথিবীর বুকে জেগে থাকে অরুণিমা র বারবার মনে হয়েছে এই সৌন্দর্য তাকে ডাকছে। পাহাড়ের আকাশ ছোঁয়া দেখে অরুণিমার ইচ্ছে হয়েছে এমন আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন বুনতে।

বেশ চলছিল জীবন। খেলাধুলো আর নিজের পাহাড়ের স্বপ্নগুলো নিয়ে অরুণিমা নিজের অন্দরমহল সাজাচ্ছিল। ২০১১ সালে নেমে আসে অন্ধকার।

6392b02a-85f7-4d1e-8511-9e642d37d44a

একটা ভলিবল কর্মশালায় যোগ দিতে পদ্মাবতী এক্সপ্রেসে করে লখনউ থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন অরুণিমা । কিছু দুষ্কৃতি তার ব্যাগ ও গলার চেন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। লড়াই বিনা এক চুল জমি ছাড়তেও নারাজ এই সাহসী কন্যা। দুষ্কৃতীদের বাধা দিতে গেলে তারা অরুণিমাকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। মারাত্মক আহত হয় অরুণিমা। তার প্রাণ বাঁচাতে বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ থেকে বাদ দিতে হয়। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেছিল কোনভাবে যদি অরুণিমার প্রাণ এবং তাঁর পা বাঁচানো যায়। কিন্তু ভাগ্য বিমুখ হয়। এই বিপর্যয় অরুণিমাকে মানসিক দিক থেকে দুমড়ে-মুচড়ে একেবারে কোটরে বন্দী একটা মানুষের পরিণত করে।

তবে ওই যে কথায় আছে সময়ের প্রলেপ সব ক্ষতকেই সারাতে পারে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করে অরুণিমা। তার কথায় “সেই সময় আমার জন্য সকলেই চিন্তিত ছিল, আমার মনে হচ্ছিল সকলেই এরপর থেকে আমায় করুণার দৃষ্টিতে দেখবে। আর সেটাই আমি এড়াতে চাইছিলাম। আমি বুঝেছিলাম আমায় এমন কিছু করতে হবে যাতে মানুষ আমার দিকে করুণার দৃষ্টিতে না তাকায়। তখনই আমি আমার পাহাড় চড়ার স্বপ্ন সফল করার দিকে মন দিই।"

অরুণিমার প্রশিক্ষক, তার পরিবার তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। অরুণিমা র দাদা তাকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল মানসিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে। ক্রিকেটার যুবরাজ সিং সেই সময় অরুণিমা কে উৎসাহ দিয়েছিলেন। প্রায় ৮ মাস ধরে অরুণিমাকে পর্বতারোহনের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন এভারেস্ট জয়ী প্রথম ভারতীয় মহিলা বাচেন্দ্রী পাল। বাচেন্দ্রী পাল বলেন "মেয়েটার সঙ্গে যখন আমার পরিচয় হয় তখন দেখি ওর একটা পা নেই, অথচ ও এভারেস্টে উঠতে চাইছে। আমি ভীষণ অবাক হই। তবে ওর সাহস, দৃঢ়সংকল্প আমায় ওকে সাহায্য করার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।"

দীর্ঘ আট মাসের প্রশিক্ষণের পর অরুণিমা  ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করেছিলেন পাহাড়ে ওঠার জন্য। ২০১২ সালে লাদাখের চামসের কাঙ্গোই চূড়োয় উঠেছিলেন অরুণিমা। তবে এভারেস্ট জয়ের আনন্দ অরুণিমার জীবনে এক অন্য আলো এনে দিয়েছিল। যে আলোকে সম্বল করে আজও নিজের মত করে এগিয়ে চলেছে অরুণিমা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...