বিগত কয়েকদিন ধরে চলা ভারত-পাক সংঘর্ষে শহীদ জওয়ানদের নাম জানালেন ভারতের সামরিক বাহিনীর ডিজিএমও স্তরের আধিকারিকেরা। রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা জানিয়েছেন, এই সংঘাতে শহীদ হয়েছেন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পাঁচ বীর।
পাক অধিকৃত সন্ত্রাসবাদী জঙ্গি ঘাঁটিগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে ভারত শুরু করেছে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান। কাশ্মীরের পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিনের মাথায় প্রত্যাঘাত করেছে ভারত। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার পরেও গোলাগুলি থামেনি। কয়েকদিন ধরে চলা এই সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পাঁচ সদস্যের।
মহম্মদ ইমতিয়াজ - সীমান্তরক্ষী বাহিনী
শনিবার ভারত-পাক সীমান্ত-লাগোয়া আরএস পুরা সেক্টরে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে শহিদ হন বিএসএফের সাব-ইন্সপেক্টর মহম্মদ ইমতিয়াজ। এই হামলায় আটজন জওয়ান আহত হন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমতিয়াজের মৃত্যু হয়। বিএসএফের তরফে জানানো হয়, সীমান্তে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়েই শহিদ হয়েছেন ইমতিয়াজ।
সুরেন্দ্রকুমার মোগা - ভারতীয় বায়ুসেনার চিকিৎসক
শনিবার সকালে জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুরে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে শহিদ হন বায়ুসেনার চিকিৎসক সুরেন্দ্রকুমার মোগা। রাজস্থানের ঝুনঝনুর বাসিন্দা সুরেন্দ্র গত ১৪ বছর ধরে বায়ুসেনায় কর্মরত ছিলেন। তিনি উধমপুরে বায়ুসেনার ৩৯ উইং-এর সদস্য ছিলেন। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে রেখে চলে গেলেন সুরেন্দ্র — একজনের বয়স ১১, অন্যজনের ৮।
এম মুরলী নায়েক - ভারতীয় সেনার জওয়ান
৮ মে নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানি গোলাবর্ষণে গুরুতর আহত হন অন্ধ্রপ্রদেশের সত্যসাই জেলার বাসিন্দা জওয়ান মুরলী নায়েক। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। অন্ধ্রপ্রদেশের সত্যসাই জেলার বাসিন্দা মুরলী ২০১৮ সালে সেনার ৮৫১ লাইট রেজিমেন্টে যোগ দেন। দিনমজুর বাবা-মায়ের একমাত্র ভরসা ছিলেন মুরলী।
দীনেশকুমার শর্মা – ভারতীয় সেনার ল্যান্সনায়েক
৭ মে পুঞ্চে পাকিস্তানি গোলাবর্ষণে প্রাণ হারান ল্যান্সনায়েক দীনেশ শর্মা। তিনি ছিলেন সেনার ৫ এফডি রেজিমেন্টের সদস্য। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। তাঁর দু’জন ভাইও সেনায় কর্মরত। তাঁর দুই সন্তান রয়েছে, দর্শন ও কাব্যা — দুজনেরই বয়স পাঁচ। তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা।
সুনীল কুমার – ভারতীয় সেনার রাইফেলম্যান
আরএস পুরা সেক্টরে শহিদ হন রাইফেলম্যান সুনীল কুমার। জম্মুর ত্রেওয়া গ্রামের বাসিন্দা সুনীলের দেহ ১১ মে গ্রামে পৌঁছয় এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
ডিজিএমও ঘাই আরও জানিয়েছেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে ১০০-রও বেশি জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়েছে। পাল্টা পাকিস্তানের হামলায় পাঁচ ভারতীয় সেনার পাশাপাশি প্রাণ হারিয়েছেন বহু সাধারণ নাগরিকও। ৭ থেকে ১০ মে’র মধ্যে পাল্টা জবাবে মৃত্যু হয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরও প্রায় ৩৫–৪০ জন জওয়ানের।