পুজোর শপিং শেষ না হলে ঝটপট বেড়িয়ে পড়ুন, রইল কেনাকাটি করার কিছু জায়গার নাম!

পুজো আসতে আর মাত্র কটা দিন। তারপরেই হবে মায়ের আগমন। এতদিনে অনেকেরই পুজোর কেনাকাটি একেবারে ‘কমপ্লিট’। পুজোর জন্যে তারা প্রস্তুত। অন্যদিকে, কাজের ব্যাস্ততার মধ্যে অনেকের বাড়ির পরিবারদের সাথে শপিং-এ যাওয়ার সময় হয়ে ওঠেনি এখনো। কেউ কেউ আবার সময় না পাওয়ায় ‘অনলাইন শপিং’ –এ সব কেনাকাটা করে ফেলেছেন। কিন্তু, প্রায় বহু মানুষ চোখে দেখে, হাতে নিয়ে তবেই কেনাকাটি করতে ভালোবাসেন। তারা তাতেই বিশ্বাসী। কিন্তু উপায় না পেয়ে এখন অনেকেই ‘অনলাইন শপিং’-এর কথা ভাবছেন। তবে, অন লাইনে অর্ডার দিলে পুজোর পরে ডেলিভারি মিলবে। তাহলে উপায়? তাদের জন্য রইল কলকাতায় সাবেকি স্টাইলে কেনাকাটি করার কিছু জায়গার নাম। এখানে কম সস্তায় অনেক সুন্দর সুন্দর জামাকাপড় পাওয়া যায়।

  • গড়িয়াহাট মার্কেট

প্রথমেই আসছে কলকাতার অত্যন্ত ব্যাস্ততম জায়গা গড়িয়াহাট মার্কেট। দক্ষিণ কলকাতার আধুনিক বাঙালির কাছে গড়িয়াহাট হচ্ছে সেরা গন্তব্য। ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা, সবরকম দামের মধ্যে পাওয়া যাবে জিনিসপত্র। এখানে দরদাম করে অনেক কম দামে ভালো জিনিস পেতে পারবেন। যারা দরদাম করতে ভালোবাসেন তারা এই মার্কেটে কেনাকাটা করতেও ভালোবাসবেন। শাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের গয়না, পোশাক, জুতো, ব্যাগ, বাসন, ঘর সাজানোর জিনিস, প্রসাধনী, খেলনা যা চাইছেন সব পাবেন এখানে। পকেটে খুব বেশি টাকা না থাকলেও চলবে। এছাড়াও ডিজাইনার ব্লাউজের খুব ভাল কালেকশনও রয়েছে এই মার্কেটে। এক ছাদের তলায় সব কিছু পাওয়া যাবে এই গড়িয়াহাটে। সবচেয়ে বড় কথা হল এই মার্কেটে সবসময় লেটেস্ট ফ্যাশনের জিনিস খুবই সহজ ভাবেই পেয়ে যাবেন।

গোলপার্ক থেকে বালিগঞ্জ, কসবা থেকে রাসবিহারী রোড ফুটপাথ জুড়ে থাকা এই মার্কেট যেন খোলা আকাশের নীচে অবস্থিত একটি আস্ত শপিং মল। সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা -সাড়ে ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই মার্কেট।

গরিয়াহাটের এবারের লেটেস্ট কালেকশন ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে। এবারের কি রয়েছে ট্রেন্ডে? দেখে নিন এই ভিডিয়তে - 

 

  • হাতিবাগান মার্কেট

দ্বিতীয় জায়গার নাম হল হাতিবাগান মার্কেট। দক্ষিণ কলকাতায় যেমন গড়িয়াহাট মার্কেট তেমনই উত্তরে হল হাতিবাগান মার্কেট। গড়িয়াহাটের মতো এখানেও শাড়ি, গয়না, পোশাক, জুতো, ব্যাগ, বাসন, ঘর সাজানোর জিনিস, প্রসাধনী, খেলনা সবই পাবেন। দাম অনেকটাই কম। লেটেস্ট কালেকশন সবসময় পাবেন এখানে। বিধান সরণি থেকে শুরু করে শ্যামবাজার হয়ে হাতিবাগানের চত্বর জুড়ে রয়েছে এই মার্কেট। এই বছর হাতিবাগান মার্কেটে কিরকম ট্রেন্ড চলছে এবারে? আপনাদের জন্য রইল এই ভিডিয়টি-

  • নিউ মার্কেট

কলকাতার অন্যতম শপিং করার গন্তব্য হল নিউ মার্কেট। এই মার্কেটের বিষয়ে গোটা কলকাতাবাসী জানে। তাই আশা করা যায় যে এই জায়গার বর্ণনা কাউকে দিতে হবে না। ইংরেজ আমলের এই বাজারের আরেক নাম হগ মার্কেট। এই মার্কেটে রয়েছে ২০০০ হাজারেরও বেশি দোকান। কি না পাওয়া যায় এখানে। লোকে বলে চাইলে বাঘের দুধ, জলহস্তির মাংসও এই নিউ মার্কেটে মেলে।

এক কথায়, ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’, এখানে যাবতীয় জিনিস পাওয়া যায় ন্যায্য দামে। জুতো, জামা, শাড়ি, খেলনা, খাবার, ঘর সাজানোর জিনিস, মশলাপাতি, আসল এবং নকল গয়না সব কিছুই পাবেন এখানে। গরমকালে শীতের পোশাক এবং শীতকালে গরমের পোশাক, কী চান? সবকিছু পাবেন এই প্রাচীন মার্কেটে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এই মার্কেটের রেশ। পুজো উপলক্ষে সময় আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই মার্কেটে প্রচুর ভীড় হয়। সন্ধ্যে হলে মাটিতে পা দেওয়া যায়না, মুখ তুললে শুধু মাথা দেখা যায়।

শুধু তাই নয়, শপিং শেষে খাওয়া দাওয়ারও অঢেল ব্যবস্থা রয়েছে এই মার্কেটের বাইরে। সব রকমের খাবারো এখানে পাবেন আপনি।

  • দক্ষিণাপন

এরপর আসি, ঢাকুরিয়া ফ্লাইওভারের ঠিক পাশে দক্ষিণ কলকাতার দক্ষিণাপন। এই ওপেন এয়ার শপিং সেন্টারটি একটি উন্মুক্ত শপিং কমপ্লেক্স। এখানে আপনি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের টেক্সটাইল, হস্তশিল্প, অভিনব পণ্য এবং অনুকরণের গয়না খুঁজে পেতে পারেন। আপনি সেখানে অনেক ভারতীয় রাজ্য সরকারের এম্পোরিয়াম পাবেন। ভারতীয় তাঁতের শাড়ি থেকে শুরু করে কুর্তি, সালোয়ার কামিজ, স্কার্ট, খাঁটি সুতির তৈরি টপস সব রকমের জিনিস পাওয়া যায়। এই দক্ষিণাপন শপিং সেন্টারে খুব যুক্তিসঙ্গত দামে পাওয়া যায়। তাছাড়া, কমপ্লেক্সে রূপার গহনার আইটেম যেমন ব্রেসলেট, নেকলেস, কানের দুল এবং আংটি পাওয়া যায়। অন্যদিকে সাদা ধাতু দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পের টুকরো এবং ধোকরা শিল্পের টুকরাও দোকানে প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও, এখানে গুর্জরি, রাজস্থলী এবং ফুলকারির দোকানগুলি দেখুন।

এবার আসি আরও দুই জায়গা, যেখানে গেলেই মিলবে খুব অল্প দামে চোখ ধাঁধানো পোশাক। জনপ্রিয় দুই পাইকারি বাজার রয়েছে কলকাতার বুকে। জামাকাপড় থেকে শুরু এখানেও বহু জিনিসই পাইকারে দরে পাওয়া যায় এই দুই মার্কেটে। পুজোয় বাঙালি পরিবারে একে অপরকে উপহার দেওয়ার রীতি তো থাকেই, তাই কম খরচে একসঙ্গে বেশ কিছু শাড়ি-কুর্তা কিনে নিলে মন্দ হবে না। পুজো আসলে তো এই জায়গায় পা দেওয়াই অসম্ভব একটা ব্যাপার হয়ে ওঠে।

  • বড়বাজার

প্রথমেই আসি, বড়বাজার। শাড়ি কিনতে চাইলে আপনাকে ঢুঁ মারতেই হবে কলকাতার সবথেকে বড় পাইকারি শাড়ি বাজারে। বড়বাজারের যমুনালাল বাজাজ স্ট্রিটে রয়েছে শাড়ি পট্টি। জনপ্রিয় শাড়ির দোকান তো সেখানে পাবেনই, সেই সঙ্গে মিলবে একাধিক পাইকারি শাড়ির দোকান। এখানে ২০০ টাকা থেকে সব রকমের শাড়ি পাওয়া যায়। আবার আপনি ঘুরতে ঘ্রুতে ১০০ টাকায় কুর্তাও পেয়ে যেতে পারেন এখানে। তবে রবিবার না যাওয়াই ভালো, কারণ এদিন বড়বাজারের অনেক দোকান বন্ধ থাকতে পারে।

  • মেটিয়াব্রুজ

অন্যদিকে, পোশাকের পাইকারি হাট হিসেবে মেটিয়াব্রুজের জনপ্রিয়তাও কিছু কম নয়! জানা গিয়েছে, দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলি থেকে পোশাক ব্যবসায়ীরা মেটিয়াব্রুজে আসেন। এই পোশাকের হাটেও আপনি অল্প মূল্যে জামাকাপড় কিনতে পারবেন। ১০০ টাকায় কুর্তা তো অবশ্যই পাবেন। এছাড়াও একটু খোঁজ করলে মিলতে পারে শাড়ি। এই বছর পুজোর বাজারে আপনার কাছে ট্রেন্ডি পোশাক তো থাকবেই, এদিকে পকেটেও টান পড়বে না!

অনেক জায়গার নাম তো বললাম। তবে, অনেকেই আবার শপিং মল থেকে কেনাকাটি করতে বেশী পছন্দ করেন। তাদের জন্য রয়েছে কলকাতায় বহু শপিং মল। তবে, এখানে সস্তায় জিনিস্পত্র নাও পেতে পারেন। এই অনেক অফারের সাথে পুজোর নতুন কালেকশন দেখে ঝটপট সেরে ফেলুন কেনাকাটি।

তাহলে আর দেরি না করে এই উইকেন্ডেই বেরিয়ে পড়ুন। পায়ে হেঁটে মার্কেট বা মল যেখান থেকেই হোক ঝটপট শপিং করে প্রস্তুত হয়ে যান এই বছরের পুজোর আনন্দ নিতে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...