বিরিয়ানির উৎস সন্ধানে

দক্ষিণ ভারতের এক মন্দিরে দেবতার ভোগ বিরিয়ানি।  দেবতার টান তো আছেই এই মন্দিরে দেবতার ভোগের টানও টেনে নিয়ে আসে ভক্তদের।

মুঘল-পাঠানদের সূত্রে  প্রবেশ ঘটলেও  ভারতের গলি থেকে রাজপথ সব জায়গায় সব ধরনের মানুষের মধ্যেই বিরিয়ানি আজ তুমুল জনপ্রিয় পদ।  অথচ বিরিয়ানিকে কিন্তুবহিরাগত বলা যায়।  সুদূর ইরান থেকে। আজ থেকে ৮০০ বছর আগে বিরিয়ানি এদেশে আসে।

এদেশে ‘বিরিয়ানি’র জন্ম নিয়ে একাধিক গল্প, মিথ প্রচলিত আছে।

প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয় ১৩৯৮ সালে তৈমুর লঙ ভারতে FotoJet (184)আসেন। তাঁর পাচকরাই এদেশে বিরিয়ানি রান্নার শুরুয়াত করেন। বড় পাত্রের মধ্যে ভেড়ার মাংস, চাল আর ঘি, মশলা দেওয়া হত। তারপর মাটির প্রলেপ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হত পাত্রের মুখ।  জ্বলন্ত কয়লার গর্তে চাপা দিয়ে রাখা হত পাত্রটিকে।

এখন ইরানের রাস্তায় যে ধরনের খাদ্যবস্তুবিরিয়ানহিসেবে বিক্রি হয় তার সঙ্গে কিন্তু আমাদের চেনা জানা ভারতীয় বিরিয়ানির কোনও মিল নেই।

পারস্য বণিক এবং মোগল শাসকদের হাত ধরে বিরিয়ানি ভারতে প্রবেশ করলেও তার অনেকটাই ভারতীয় করন ঘটে।

বিরিয়ানি শব্দটি উর্দু উৎস ফার্সি।  ফারসি ভাষায় বিরিঞ্জ অর্থ চাল বিরিয়ান অর্থ ভেজে নেওয়া। অর্থাৎ মূলত ভাজা মাংস ভাতের সহযোগে তৈরি পদ এটি বিরানি, বেরিয়ানি, বিরিয়ান্নি ইত্যাদি নামেও পরিচিত। বিরিয়ানি রান্নার আগে চাল ঘি  দিয়ে ভেজে নেওয়া প্রথা ছিল।  

 সেই বিরিয়ানির বিবর্তন ঘটেছে। মুঘল-পাঠানের প্রিয় পদ এখন আদ্যান্ত ভারতীয়। তবে বদল ঘটেছে বিস্তর। নান রকম পরীক্ষানিরিক্ষা এখনও জারি।  ভেড়ার মাংসের বদলে মাটন, চিকেন, চিংড়ি এমন কী সবজি , পনির পর্যন্ত হয়ে উঠেছে বিরিয়ানির উপকরণ।

উপকরণের বদল যেমন হয়েছে তেমনই নিত্য নতুন নাম দেওয়া হয়েছে খুব পছন্দের এই পদটির।  

FotoJet - 2019-09-12T192836.449

অওয়াধি বিরিয়ানি, হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি , কলকাতা বিরিয়ানি, মালাবার বিরিয়ানি, মোরাদাবাদী বিরিয়ানি,  সিন্ধ্রি বিরিয়ানি, লখনউ বিরিয়ানি, থালাসারি বিরিয়ানি ও কোঝিকোড় বিরিয়ানি , মেমোনি বিরিয়ানি, কামপুরি বিরিয়ানি, হাজার এক নাম, হাজার এক স্বাদ।

বিরিয়ানিতে মিশেছিল সুফি টাচও। রাজপুত ঘরানার ফ্লেভারে মিশেছে অন্যরকম রঙের ছোঁয়া। ঢিমে আঁচে অর্থাৎ দমে রান্না করার কৌশলেই লুকিয়ে থাকে বিরিয়ানির স্বাদ।

ভারতের দক্ষিণ থেকে উত্তর বিরিয়ানি বদলে গিয়েছে আঞ্চলিক চরিত্র অনুযায়ীই। উত্তর ভারত এবং দক্ষিণ ভারতে বিরিয়ানিতে মশলা এবং চালের ব্যবহারে ভিন্নতা আছে।

লখনউ-এর নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ বিরিয়ানি চিনিয়েছিলেন এই শহরকে।  ১৮৫৬ সালে কলকাতায় আসেন তিনি। শেষ জীবন কেটেছিল এখানেই।

FotoJet - 2019-09-12T200302.213

কলকাতার বিরিয়ানির বিশেষত্ব যেমন আলুর সংযোজনে। এখানকার বিরিয়ানিতেই ডিম ও আলু ব্যবহার হয়।  ডিম আর আলুর রন্ধ্রে রন্ধ্রে লেগে থাকে বিরিয়ানির সুগন্ধ।  যা একেবারেই নবাবের নিজস্ব উদ্ভাবন।  সেই ধারাই হয়ে দাঁড়ায় কলকাতা বিরিয়ানির ‘সিগনেচার’ স্টাইল।  

 

 

 

    

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...