অরিন্দম ভট্টাচার্যর ‘শিবপুর’। শুরু থেকেই বেশ অন্য রকম এক ছবি। বাংলা ছবির চেনা ছকে পরিচালক হাঁটেননি। এ ছবিতে হিংসা, রক্ত, রাজনীতি সবই আছে। দেখতে গিয়ে গা শিরশির করে উঠবে। হিন্দি ওয়েব সিরিজ ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’-এর কথা মনে পড়বে। আর সেই মুহূর্তে মনে হবে এ ছবির প্রেক্ষাপট আমাদের চেনা হাওড়া। তবে সময়টা আশির দশক।
হাওড়া শহরের এক পরিচয় যদি হয় বোটানিক্যাল গার্ডেন, বিই কলেজ তেমনিই ভুলে গেলে চলবে না হাওড়া 'কলকারখানার শহর'। মনে পড়ে যাবে শালিমার রেল ইয়ার্ডের কথা। শালিমার রেল ইয়ার্ডের দখলদারি মানেই নিয়মিত বন্দুকের লড়াই, দিনে দুপুরে লাশ পড়ে থাকা, স্ক্র্যাপ লোহার চোরাই কারবার। টানা রাজত্ব করেছে নেপাল ভট্টাচার্য, তপন, মন্দিরা এবং সেই সময়কার কিছু রাজনৈতিক নেতা। ‘শিবপুর’ ছবিটি এদের নিয়েই তৈরি হয়েছে।
আশির অশান্ত মধ্য হাওড়ায় সুস্থ পরিবেশ আবার ফিরিয়ে আনা, একজন সাধারণ গৃহবধূর মাফিয়া কুইন হয়ে ওঠার গল্প বলল অরিন্দম ভট্টাচার্যের ‘শিবপুর’। এই ছবির কেন্দ্রীয় দুই চরিত্র হল পুলিশ অফিসার সুলতান আহমেদ (পরমব্রত) অন্যদিকে মন্দিরা (স্বস্তিকা)। ছবি শুরু হয় এক টিভি সাংবাদিকের সঙ্গে সুলতানের এক সাক্ষাৎকার দিয়ে। সেখানেই তিনি বলছেন তার কর্মজীবনের কিছু না বলা কথা।
এই ছবিতে রহস্য ও নাটকীয়তা দুই রয়েছে। আইপিএস পুলিশ অফিসার, সুলতান আহমেদ যার ওপর দায়িত্ব ছিল গুন্ডা দমন করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা। তিনি খুব সাবলীল ও স্বাভাবিক অভিনয় করেছেন এই ছবিতে। লেডি ডনের চরিত্রে স্বস্তিকা ও মমতা শংকরকে দুজনকেই অসাধারণ লেগেছে, তারা নিখুঁত অভিনয় করেছেন। পুরো ছবিতেই। তাদের ভঙ্গি, চালচলন, দাপট সবটাই দুর্দান্ত ভাবেই অভিনয় করে দেখিয়েছেন। বিশেষ করে মমতা শঙ্কর, কারণ তিনি এমন নেগেটিভ চরিত্র কখনও করেননি। ছবির চিত্রগ্রহণ আলাদা প্রশংসার দাবী রাখে। খরাজ মুখোপাধ্যায়ের চরিত্র অনুযায়ী তিনিও দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। ছোট ছোট চরিত্রে রজতাভ দত্ত, সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়, সুমিত সমাদ্দার সকলেই ভাল করেছেন। তাদের এই অভিনয়ের জন্য ছবিটি একটা অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।
‘শিবপুর’ নিয়ে এত কিছু বিতর্কের পর, ছবিটি কিন্তু একটি জায়গা করে নিয়েছে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে। অনেকের কাছে ছবির হিংসা অতিরিক্ত মনে হতে পারে। তবে যাঁরা অ্যাকশন থ্রিলার পছন্দ করেন তাঁদের কাছে ছবি অত্যন্ত স্বাভাবিক। এই ছবি একবার দেখে আসতে পারেন বড় পর্দায়।