অপেক্ষা আর মাত্র একদিনের। তারপরই এসে যাবে বাঙালির প্রাণের কাছের উৎসব বসন্ত উৎসব। বসন্তের সেই রঙিন দিনে সকলেই চায় ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে উঠতে। কিন্তু বাজারে উপলব্ধ আবির বা রং-এ থাকা রাসায়নিক মানুষকে রাঙিয়ে তোলার পাশাপাশি করে ত্বকের যাবতীয় ক্ষতিসাধন। অনেকেই মনে করেন, বাজারচলতি গোলা রঙের তুলনায় আবির তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর। কথাটা আপেক্ষিকভাবে সত্যি হলেও আপনি কি জানেন, আজকাল বাজারে যে আবির পাওয়া যাচ্ছে তাও যথেষ্ট ক্ষতিকর?
বড়রা দোলের ভরপুর আনন্দ নিলেও এই উৎসবে সবচেয়ে বেশি আনন্দ করে সাধারণত শিশুরা। সেই ক্ষেত্রে শিশুদের অভিভাবকরাই তাদের হাতে তুলে দেন আবিরের প্যাকেট। সেইক্ষেত্রে অসাবধানতাবশত কোনো শিশু সেই আবির মাখা হাত যদি মুখে দিয়ে ফেলে তাহলে সেই আবিরের অংশ শ্বাসনালিতে আটকে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া আবিরে থাকা ক্ষতিকর কেমিক্যাল থেকে ত্বকেরও ক্ষতি হতে পারে। আজকাল কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আবিরের মধ্যেই রং মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করছে। ফলে সেই রংমিশ্রিত আবির থেকে ক্ষতির আশংকা থাকছে বেশি।
চলুন আজ আমরা কিছু ভেষজ আবির বানানো শিখি। বাজারের আবিরের থেকে অনেক নিরাপদ, সম্পূর্ণ ভেষজ সামগ্রী দিয়ে তৈরী এই আবির থেকে ক্ষতির আশংকা থাকে কম। চলুন, এক এক করে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা, মেরুন, গোলাপি এইসব রঙের আবির বানানো শিখি।
১) লাল আবির বানানোর ব্যবহার করতে পারেন লাল চন্দন। পুজোয় কাজে লাগার দরুন প্রায় সমস্ত বাড়িতেই লাল চন্দন থাকে। লাল চন্দন বেটে নিয়ে তাকে শুকিয়ে নিলেই তৈরী লাল আবির। এর সাথে ময়দা মিশিয়ে পরিমান বাড়িয়ে নিলেই তৈরী বাজারের মতো আবির। যদি বাড়িতে লায়লা আবির না থাকে তাহলে আপনি যেকোনো দশকর্মার দোকানে গেলেই পেয়ে যাবেন লাল চন্দনগুঁড়ো। সেই গুঁড়োর সাথে ময়দা মিশিয়ে নিলেও আপনি পেয়ে যাবেন লাল আবির যা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। এছাড়াও লাল জবা ফুলের পাঁপড়ি শুকিয়ে, গুঁড়ো করে নিয়েও তৈরী করা যাবে লাল আবির। এর সাথে ট্যালকম পাউডার মিশিয়ে নিলে পরিমাণেও বাড়বে আর আবিরে সুগন্ধও হবে।
২) হলুদ আবির তৈরীর জন্য কাঁচা হলুদ সবচেয়ে ভালো। বাজার থেকে কাঁচা হলুদ কিনে এনে ছাল ছাড়িয়ে বেটে নিন। এবার এই বাটা মিশ্রণ শুকিয়ে নিয়ে ট্যালকম পাউডার বা ময়দার সাথে মিশিয়ে পরিমানে বাড়িয়ে নিন। তৈরী ভেষজ হলুদ আবির। এছাড়াও হলুদ গাঁদা ফুলের পাঁপড়ি বা হলুদ চন্দ্রমল্লিকার পাঁপড়ি শুকিয়ে, গুঁড়ো করে নিলেও আপনি পাবেন বিশুদ্ধ হলুদ আবির।
৩) সবুজ আবির বানানোর জন্য আপনি কাজে লাগাতে পারেন হেনা পাউডার। ঘন সবুজ রং পাওয়ার জন্য ময়দার সাথে হেনা পাউডার মেশান। তাছাড়া উপরোক্ত পদ্ধতিতে যেকোনো গাছের পাতা শুকিয়ে তারপর গুঁড়ো করে নিয়ে ময়দা বা ট্যালকম পাউডার মিশিয়ে নিলেও তৈরী হয়ে যাবে ঘন সবুজ আবির যা বাজারচলতি আবিরের থেকে অনেক বিশুদ্ধ।
৪) নীল আবিরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হবে যদি অপরাজিতা বা নীলকণ্ঠ ফুল পাওয়া যায়। নীলকণ্ঠ ফুল শুকিয়ে নিয়ে পরে গুঁড়ো করে নিলেই তৈরী নীল আবির। এতে বাজারচলতি নীল আবিরের মতো গাঢ় রং হয়তো পাবেন না কিন্তু এই আবির আপনার ত্বকের কোনো ক্ষতি করবে না।
৫) খয়েরি আবির বানানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে কফি পাউডার। এক্ষেত্রে অল্প জলের সাহায্য নিয়ে কফি পাউডারটি গুলিয়ে নিন। এবার সেই কফি পাউডার মেশানো জল দিয়ে ময়দা মেখে সেই ময়দা কড়া রোদে শুকোতে দিন। শুকিয়ে গেলে চালুনি দিয়ে চেলে প্যাকেটবন্দি করে ফেলুন নিজের হাতে তৈরী ভেষজ ব্রাউন আবির।
৬) মেরুন রঙের আবির আজকাল বাজারে বেশ চলছে। বাড়িতেই এই মেরুন আবির বানানোর জন্য লাগবে একটি বিট। প্রথমেই বিটকে বেটে নিন। আর সেই বাটা মিশ্রণ রোদে শুকিয়ে নিলেই তৈরী গাঢ় মেরুন রং। এবার একে পরিমানে বাড়ানোর জন্য এতে ময়দা বা ট্যালকম পাউডার মিশিয়ে নিন।
৭) কমলা আবিরের জন্য আপনার লাগবে লাল ও হলুদ এই দুটি রঙের আবির। আমরা এর আগেই লাল ও হলুদ আবির বানানো শিখলাম। সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে লাল ও হলুদ আবির বানিয়ে নিন। এবার এই দুটি আবির মিশিয়ে নিলেই আপনি পেয়ে যাবেন কমলা আবির।
তাহলে আজ আমরা জানলাম ভেষজ পদ্ধতিতে সাতটি রঙের আবির তৈরীর সহজ পদ্ধতি। তাই এবছরের বসন্ত উৎসবে বিদায় জানান রাসায়নিক মিশ্রিত আবিরকে আর নিজেই বাড়িতে বানিয়ে নিন ভেষজ আবির যা প্রকৃতপক্ষে আপনার ত্বকের যত্ন নেওয়ার সাথে সাথেই আপনাকে দেবে দোল খেলার অনাবিল আনন্দ। তাই এই বছর সন্তানের বা ভাই বোনের হাতে তুলে দিন নিজের হাতে বানানো নানা রঙের আবির।