এনসেফ্যালাইটিস থেকে বাঁচার উপায়

মাথায় ভাইরাসঘটিত সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট অবস্থাকে বলা হয় এনসেফ্যালাইটিস। মাথায় এনসেফ্যালন ভাইরাসের আক্রমণের ফলে যখন মস্তিষ্ক অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায় তখন সেই রোগকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এনসেফ্যালাইটিস বলা হয়ে থাকে। এনসেফ্যালাইটিস একধরণের রেয়ার ডিজিজ বা কঠিন অসুখ। সব বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয় না। চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের মত, মোটামুটি ৩ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

 

রোগের লক্ষণ-

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির যেসব লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো, জ্বর আর শরীরে খিঁচুনি। এর সাথে মাথা যন্ত্রনা, খিদে কমে যাওয়া, ক্লান্তি অনুভব করা। এইগুলি হলো প্রাথমিক লক্ষণ। এই রোগ গুরুতর আকার ধারণ করলে, প্রচন্ড জ্বর, তীব্র মাথাযন্ত্রণা, বমিভাব, বমি হওয়া, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, কনফিউশন, হ্যালুসিনেট করা প্রভৃতি দেখা দেয়।

এই সমস্ত লক্ষণকে এই রোগের লক্ষণ বলে মানা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগ শরীরে বাসা বাঁধার পরেই তার আসল লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই রোগ বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেলে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসে এবং শেষ পর্যন্ত রোগী কোমায় চলে যায়।

 

রোগের কারণ-

১) বিভিন্ন ভাইরাস ঘটিত কারণ যেমন হারপিস ভাইরাস, চিকেনপক্স ভাইরাস, ইবিভি ভাইরাস প্রভৃতির থেকে এনসেফ্যালাইটিস হতে পারে।

২) চিকেনপক্স, মামস,জার্মান মিজলস প্রভৃতির থেকে এই রোগ হতে পারে।

৩) পতঙ্গবাহিত ভাইরাস বা জীবাণুর মাধ্যমেও মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

৪) এছাড়াও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণেও এই রোগ হতে পারে। একে ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস বলা হয়ে থাকে।

৫) এনসেফ্যালাইটিস ছোঁয়াচে রোগ নয় তাই সংস্পর্শ বা সেরকম কোনো কারণে এই রোগের বিস্তার হয় না।

 

রোগের শনাক্তকরণ-

১) সিটি স্ক্যান, ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স প্রভৃতি পদ্ধতির দ্বারা এই রোগ শনাক্ত করা যায়।

২) ইলেক্ট্রোএনসেফ্যালোগ্রাম নামক একটি বিশেষ টেস্টের মাধ্যমে এই রোগের নির্ণয় সম্ভব।

৩) এছাড়াও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়।

৪) সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড সংগ্রহ করেও এই রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

 

রোগের চিকিৎসা-

এই রোগের চিকিৎসার জন্য মূলত অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ চিকিৎসকেরা দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস যদি আক্রমণ করে তাহলে এই ওষুধে কাজ দেয়। কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ফোলাভাব কমানোর জন্য কর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধ দেওয়া হয়। অ্যান্টিকনভেলসেন্টস দেওয়া হয় যদি শিশুর অতিরিক্ত খিঁচুনি হয়। এছাড়াও ওভার দা কাউন্টার মেডিসিন ও কিছু ক্ষেত্রে কাজ দিয়ে থাকে।

এই রোগ ভাইরাসঘটিত হয়ে থাকলে অ্যান্টি বায়োটিক কাজ দেয় না। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা অন্য ওষুধ দিয়ে থাকেন। এই রোগ মোটামুটি এক সপ্তাহের বেশি থাকে না। তবে দুর্বলতা কাটাতে এক মাস সময় লেগে যেতে পারে।

এই রোগ থেকে বাঁচার উপায়-

১) এই রোগ প্রতিরোধ করা যায় না। কিন্তু এই রোগ যাতে বেশি তীব্র না হতে পারে তা দেখা উচিত সকলের। বিশেষ করে শিশুদের দিকে খেয়াল রাখা উচিত। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরাই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগ যেহেতু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে তাই একজন থেকে অন্যজনের কাছে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাড়িতে কারোর এই রোগ হয়ে থাকলে বাড়ির বাকি সদস্য যাতে খাবার খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নেয় সেইদিকে খেয়াল রাখা উচিত। শিশুদের ঘরের বাইরে বেশি খেলতে দেওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে শিশুরা যাতে কাদা না ঘাটে সেইদিকে নজর দেওয়া উচিত। শিশুদের যতটা সম্ভব ফুল হাত জামা পরানোর ব্যবাস্থা করুন। বাইরে থেকে ফেরার পর শিশুরা যাতে ভালো করে পা হাত ধোয়, সেইদিকে খেয়াল রাখা উচিত।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...