প্রাক্তন এবং বর্তমান- কে প্রকৃত ‘অর্ধাঙ্গিনী’?

সদ্য মুক্তি পেয়েছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি ‘অর্ধাঙ্গিনী’। কোনও সম্পর্ক ছেড়ে আসা কি এতটাই সহজ, যে ইচ্ছে করলেই বা চাইলেই ছেড়ে আসা যায়। সব অভ্যাস কি ভুলে যাওয়া যায়? এই প্রশ্নই তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে।

‘অর্ধাঙ্গিনী’-তে দুই নারী, এক পুরুষ। একজন প্রাক্তন এবং আরেকজন তাঁর বর্তমান স্ত্রী।  তাদের জীবনের ওঠাপড়ার গল্প, তুলে ধরে অতীত এবং বর্তমানের সমান্তরাল লড়াইকে, একটি পুরুষকে ঘিরে।

 

 

বিয়ের সতেরো বছর পর সুমন চট্টোপাধ্যায় (কৌশিক সেন) এবং শুভ্রা চট্টোপাধ্যায় (চুর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়)-এর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। সুমন বাবা হতে অক্ষম, কিন্তু তিনি সেটা মানতে নারাজ। ফলে সংসারে নিত্যদিন অশান্তি, ঝামেলায় বাধ্য হয়ে আলাদা হতে হয় তাদের। সুমনকে খুবই ভালোবাসে শুভ্রা। তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে বহু বছর ধরে সুমনের থেকে পাওয়া অনেক অপমান সহ্য করেছে সে। কিন্তু শেষপর্যন্ত শুভ্রা তাঁর সাধের গোছানো সংসার, অভ্যাস ছেড়ে চলে আসেন। সুমনের পরিবারও মেতে নিতে পারেনি শুভ্রার সংসার ছেড়ে চলে যাওয়াটা। বিচ্ছেদের ৩ বছর পরেই সুমনের জীবনে আসেন একজন বাংলাদেশি গায়িকা, ধর্মে মুসলিম,  মেঘনা (জয়া আহসান)। কাছাকাছি আসেন তাঁরা। কিন্তু বাড়ির লোক সেটা মানেন না ধর্মের কারণেই। তাই  ভবানীপুরের বনেদি বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন সুমন। ভবানীপুরের অভিজাত পরিবারে ঠাঁই পায় না মেঘনা। নতুন করে সংসার পাতেন মেঘনার সঙ্গে। মেঘনারও প্রাক্তন স্বামী প্রয়াত। আচমকাই সেরিব্রাল অ্যাটাক হয় সুমনের। এখানেই সবকিছু ঘুরে যায়।

 

 

ভাগ্যের পরিহাসে মুখোমুখি হন সুমনের দুই অর্ধাঙ্গিনী। সংসার ছেড়ে এলেও শুভ্রা কিছু ভোলে না। সে সাহায্য করে অসহায় মেঘনাকে সব কিছু খুঁজে দিতে। সময়ের সঙ্গে গল্প ফের একটা নতুন বাঁক নেয়। আর সেখানেই নতুন করে সম্পর্কের আরও একটা দিক উঠে আসে। সেটা কি? সেটা জানতে গেলে ছবিটা দেখতেই হবে।

ছবির পোস্টার দেখেই বলাই যায়, ‘অর্ধাঙ্গিনী’যতটা চূর্ণীর, ঠিক ততটাই জয়ার। সাধারণত স্ত্রীকে স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী বলা হয়, কিন্তু এই ছবিতে শব্দটির অনেক কিছু দেখাতে চেয়েছেন পরিচালক। এই ছবিতে কৌশিক সেনের অংশ খুবই কম ছিল। পুরো গল্পটাই চূর্ণী এবং জয়াকে ঘিরেই করা হয়েছে, এবং সঙ্গে ছিলেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য। প্রথম দৃশ্যেই এই ছবির প্রাণ-প্রতিষ্ঠা করেছেন চূর্ণী। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে চোখের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে তার ‘প্রাক্তন’। মন চাইলেও সে ছুটে যায় না, তার পা আটকে যায় অভিমান এবং অপমানের জন্যে ‘শুভ্রা’ কি খুব স্বার্থপর? নাকি অসহায়? দ্বিধায় ফেলেছে দর্শককেও। একটি দৃশ্যে নিজের প্রিয়জন ও সংসারকে অন্যের হাতে সাজিয়ে তুলে দিচ্ছে শুভ্রা। এই অভিনব ভাবনাকে বোধহয় একমাত্র রূপ দিতে পারেন চূর্ণীই। অপর দিকে, মেঘনার চরিত্রে অসহায়তার দৃশ্যে জয়া অনবদ্য।সুমনের মায়ের চরিত্রে অভিনেত্রী লিলি চত্রবর্তী অভিনয় মনে রাখার মতো। আরও এক জনের কথা না বললেই নয়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, তাঁর অভিনীত সুকান্ত চরিত্রটি যেমন ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেছে, তেমনই এমন সিরিয়াস ছবিতে কৌতুক হাজির করে দর্শককে হাসিয়েছে। ছোট ছোট চরিত্রে প্রয়াত অভিনেতা অরুণ গুহঠাকুরতা, দামিনী বেণী বসুর অভিনয় ছবিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

এই ছবিতে গানের ব্যবহার, বিশেষ করে লিরিক্সের ব্যবহার অনবদ্য। অনুপম রায়, ইমন চক্রবর্তী এবং সাহানা বাজপেয়ীর গান ছবিতে অন্যমাত্রা এনেছে। ক্যামেরার কাজ কিংবা ব্যাকগ্রাউন্ড অসাধারণ। তবে বাকি ছবির মতই এই ছবিটির মনে গেঁথে থাকবে সেটা হল স্ক্রিপ্ট এবং কিছু ডায়লগ। যেমন 'একজন অসুস্থ মানুষের দেশ, দল, সম্পর্ক কিছুই থাকে না। কিংবা 'এক সংসারে থেকে নিত্যদিনের অশান্তির থেকে বরং 'ভালো থাক মন্দ থাক, নিজের মতো করে বাঁচ' এখান থেকে বেরিয়ে, ইত্যাদি। অধিকার ছেড়ে এলেই যে ছেড়ে আসা যায় না। বরং পরিস্থিতি বুঝে আমরা সেই অধিকারের অন্য কাউকে দমিয়ে দিই সেটা ভীষণ সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে, সময়কালকে সুন্দর ভাবে পাশাপাশি তুলে ধরেছে এই ছবিতে।

পরিবারের সাথে দেখে আসতেই পারেন 'অর্ধাঙ্গিনী' সব মিলিয়ে আপনাকে নিরাশ করবে না!

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...