ICE Business started in nineteenth century : মহানগরের বরফবিলাস, বরফ কিনলে সাহেব-সুবোদের আভিজাত্য বাড়ত কলকাতায়

এক সময় কলকাতার সাহেব, সুবো, বাবুরা বাড়িতে 'আবদার' রাখতেন, তাঁদের পেশা ছিল পানীয়ের গেলাসে বরফ ঢালা। আদতে মহানগরের বরফবিলাস আজকের কথা নয়। তখন কোথায় আইসক্রিম! বোস্টন থেকে বরফ আসত ব্রিটিশদের সাধের কলকাতায়। পলাশীর যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সাহেবরা কলকাতায় জমিয়ে বসেছিল, নিজেদের বিলাসের জন্য যাবতীয় সুখ, ঐশ্বর্য্যে তাঁরা সাজিয়ে তুলেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রাচ্যের প্রাণকেন্দ্র কলকাতাকে। মার্কিন মুলুক থেকে আসা বরফের দাম ছিল প্রতি পাউন্ড ১ টাকা। সে'যুগে কম কথা নয়! তবে হুগলির চুঁচুড়ায় একাধিক বরফকল ছিল, সেখান থেকেও অপরিষ্কার বরফ কলকাতায় আসত, কিন্তু তা খাওয়া যোজ্ঞি ছিল না।

বোস্টন ও নিউ ইংল্যান্ডের বিভিন্ন হ্রদ থেকে বরফ তুলে নানান গ্রীষ্মপ্রধান দেশে; যেখানে বরফ মেলা দায়, এমন দেশে রপ্তানি করা হত। ১৮৩৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বোস্টন থেকে প্রথম কলকাতায় পৌঁছয় বরফ। স্বচ্ছ, পরিষ্কার বরফ, যা খাওয়ার যোগ্য। টাস্কানি নামের একটি জাহাজে ১৮০ টনের মতো বরফ কলকাতায় আনা হয়েছিল। ফ্রেডরিক টিউডর প্রথম ব্রিটিশ ভারতে বরফ নিয়ে আসেন। কিন্তু সমুদ্রযাত্রায় অনেক বরফই গলে গিয়েছিল। তাও মোটের উপর একশো টন ছিল। যেদিন সে বরফ কলকাতায় এল! সে কী আনন্দ! ব্রিটিশরা আনন্দে কিনল বরফ। শহরের উচ্চবিত্ত বাঙালি বাবুরাও বরফ কিনলেন। শহরে তৈরি হল আইস হাউজ, চার্চ লেনের দিকে মুখ করে তৈরি হয়েছিল বরফ ঘর। শহরের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হতে থাকে খুচরো বরফ বণ্টনের বিতরণকেন্দ্র। ওজন করে মেপে, প্যাকেটে করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যেত বরফ। এতে আবার কালো বাজারিও হত, বরফ কিছুটা বেচে দিতেন কাজের লোকেরা। বাবুদের বলতেন গলে গেছে। তবে টিউডর আইস কোম্পানির ব্যবসা জমে উঠেছিল। দিশি হুগলি বরফ তখন ব্যাকফুটে! 

টিউডরের ব্যবসা দেখভাল করতেন উইলিয়াম রজার্স, বেশ করিৎকর্মা ছেলে। ব্যবসার অংশীদারও ছিলেন। এদেশে আমদানি শুল্ক অবধি ছাড় করিয়েছিলেন রজার্স। তাঁকে আবার কলকাতার লালমুখো সাহেবরা সংবর্ধনা দিয়েছিল, কারণ তিনি বরফ আনছেন। কৃতজ্ঞতা জানাতেই হয়।

মার্কিন বরফ এক সময় শহরবাসীর দৈনন্দিন প্রয়োজন হয়ে উঠল। বাড়িতে বাড়িতে বরফ-বাক্সের দেখা মিলত। বরফ বণ্টনের জন্য কমিটি তৈরি হয়, তাতে সদস্য হন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। হিন্দুরাও গঙ্গা জলের সঙ্গে বরফ মিশিয়ে গরমকালে পান করতে শুরু করেন। ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

কিন্তু সুদিন বেশিদিন টেকে না। এক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছিল। ১৮৭৮ নাগাদ বরফ ব্যবসার পড়তে শুরু করে। শিল্প বিপ্লবের দৌলতে এ'দেশে খাওয়ার যোগ্য কৃত্রিম বরফ তৈরির প্রযুক্তি এসে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় বরফকল তৈরি হতে থাকে। একে একে তৈরি হয় বেঙ্গল আইস কোম্পানি,

ক্রিস্টাল আইস কোম্পানি, ক্যালকাটা আইস অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড। দেশেই যখন তৈরি হচ্ছে, তখন আর কে জাহাজে বরফ আমদানি করার ঝক্কি পোহাতে! কেই বা অপেক্ষা করবে। দেশে উৎপাদিত বরফ দামেও সস্তা। অচিরেই মার্কিন বরফের চাহিদা কমে। মহানগরবাসীর বরফবিলাস থেকে একটি অধ্যায় মুছে যায়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...