বাজি কী করে কালী পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠল?

দুগ্গা পুজোর পরই বাড়তে থাকে হেমন্তের হিমেল পরশ, ঋতু বদলের সময় কার্তিকের অমাবস্যায় পূজিতা হন দেবী কালী। কালী পুজো মানেই আলোর উৎসব। সঙ্গে থাকে বাজি। আদপে কালী পুজোয় বাজি ফাটানো হয় আলোক উৎস হিসেবে। কিন্তু বাজিকে শব্দ বাজি হিসেবেই দেখে আম বাঙালি। যদিও সচেতন মানুষ এখন শব্দ বাজি ব্যবহার থেকে সরে এসেছে। দিন দিন সবুজ বাজির ব্যবহার বাড়ছে। যা পরিবেশ বান্ধব। কিন্তু কালী পুজোর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে গেল বাজি?

বাজি আদপে বঙ্গ জীবনের অঙ্গ। বুড়িমার বোমা ফাটায়নি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দায়। পাগলা দাশুর চিনে পটকা থেকে পুরনো কলকাতার বর্ষবরণে বাজি, আনন্দ উদযাপনে বাজির উপস্থিতি ছিল চমকপ্রদ। চড়কি, রঙ মশাল, হাউই, তুবড়ি, তারাবাজি থেকে সাপ বাজি, ছুঁচো বাকি, হাল আমলের ক্র্যাকলিং ক্র্যাকার, ফায়ার ব্লাস্ট, বাটার ফ্লাই ক্র্যাকার বাজি রকম ফেরের শেষ নেই।

আবহমান কাল থেকে বাজি কি বাঙালি সংস্কৃতির অঙ্গ?

সুবে বাংলার নবাবরা উৎসব, অনুষ্ঠানে বাজি পোড়াতেন। যুদ্ধ জয়ের উদযাপন হত বাজি পুড়িয়ে। বিশ শতকে বাঙালি বাড়ির বিয়ে উপলক্ষ্যেও বাজি ফাটানো হত। সতেরো শতকে লেখা সৈয়দ আলাওলের পদ্মাবতী কাব্যে চিতোরের রাজা রতন সিংহ আর সিংহলের রাজকুমারী পদ্মাবতীর বিয়ে উপলক্ষ্যে বাজি ফাটার কথা পাওয়া। কিন্তু উনিশ শতক পর্যন্ত বাংলায় বাজির তেমন উল্লেখ নেই। হুতোম পেঁচার নকশাতেও নেই। বাজি বহির্বঙ্গ থেকে এসেছে। উত্তর ভারতের দেওয়ালি থেকে বাঙালি বাজি ফাটানো শিখেছে। নিতান্ত বাণিজ্যিক স্বার্থে তার বাড়বাড়ন্ত বেড়েছে। আমুদে ধনী বাঙালিও বৈভব দেখাতে বাজি সংস্কৃতিকে সাদরে গ্রহণ করেছে। তাকে হৃষ্টপুষ্ট করেছে।

বিংশ শতকের গোড়ায় কলকাতার বাবু কালচারে জাঁকিয়ে বসে বাজি সংস্কৃতি। বনেদি বাড়িতেও তা ঢুকে পড়ে। সত্তর-আশির দশকে পাড়ায় পাড়ায় তুবড়ি, রংমশাল বিশারদদের ভিড় জমতে থাকে। সে সময় কার বাজির আগুনের ফোয়ারা কত দূর উঠল তা নিয়েও প্রতিযোগিতা হত। কালী পটকার আওয়াজ আর তুবড়ি আলোর রোশনাই ক্রমেই হয়ে উঠেছে আনন্দের উপাদান। তবে পল্লী বাংলার বাজির আলাদা তাৎপর্য রয়েছে, হেমন্তের শুরুতে পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়ে। তা দমনের জন্যেই বাজির ব্যবহারের শুরুয়াৎ। বাজির ধোঁয়ায় কীট পতঙ্গ টিকতে পারত না।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...