নবদ্বীপের এই মন্দিরে রাখা মহাপ্রভুর চরণপাদুকা, নিত্য সেবা করতেন শ্রীমতি বিষ্ণুপ্রিয়া

নবদ্বীপের প্রধান ঈশ্বর ধামেশ্বর মহাপ্রভু। সারা বিশ্বের মানুষ নবদ্বীপে আসেন শ্রীমতি বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী সেবিত এই ধামেশ্বর মহাপ্রভুর টানেই। ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দিরেই রূপের বাক্সে রাখা আছে মহাপ্রভুর একজোড়া পাদুকা। এই পাদুকা পুজো করতেন বিষ্ণুপ্রিয়া। মুরারী গুপ্তের কড়চায় উল্লেখ আছে পাদুকার।

কথিত আছে সন্ন্যাস গ্রহণের পর শান্তিপুরে মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন মহাপ্রভু। নীলাচল ফিরে যাওয়ার পথে নবদ্বীপে নিজের বাটিতে আসেন মহাপ্রভু। কিন্তু সন্ন্যাসীর স্ত্রী দর্শনে মানা।  বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়নি।  তিনি দেখেছিলেন আঙিনায় মহাপ্রভুর স্থানে শুধু এক জোড়া চরণপাদুকা পড়ে আছে। সেই চরণপাদুকা ঠাকুরঘরে রেখে তার পুজো শুরু করেন বিরহিনী বিষ্ণুপ্রিয়া। মহাপ্রভু বিশারদদের মতে এই পাদুকার বয়স পাঁচশো পেরিয়েছে।

শ্রী ধামেশ্বর মন্দিরের ধামেশ্বর মহাপ্রভুর মূর্তি তৈরী হয় ১৫১৩ সালে। তার ঠিক তিনবছর আগে মানে খ্রিস্টাব্দে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন শ্রী চৈতন্যদেব।  বলা হয়, যে নিম গাছের তলায় তাঁর জন্ম হয়েছিল, সেই গাছের কাঠ দিয়েই তৈরি হয়েছিল চৈতন্যদেবের দারু বিগ্রহটি। বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী স্বপ্নাদেশ পেয়ে চৈতন্যদেবের মূর্তি গড়েন। মূর্তির পাদপীঠে খোদাই করা আছে ‘১৪৩৫ শক, বংশীবদন’। অনুমান বংশীবদন নামের এক শিল্পী এই মূর্তির রূপকার।

প্রতিদিন সকাল ভোর থেকেই শুরু হয়ে যায় ধামেশ্বর মন্দিরের ব্যস্ততা। সকালে শ্রী ধামেশ্বর মহাপ্রভুকে দেওয়া হয় বাল্যভোগ। ক্ষীর, ছানা, ফল ইত্যাদি থাকে ভোগে। তারপর অর্চনা পর্ব। সারাদিনে মোট পাঁচবার মহাপ্রভুর সেবাপুজো হয়।

দুপুরে প্রভুকে দেওয়া হয় রাজভঅগ। অন্ন, ব্যঞ্জন, শুক্তো, মোচা ইত্যাদি। গঙ্গা জলে কাঠের আগুনে রান্না করা হয়। এক কাপড়ে নির্জলা অবস্থায় ভোগ রন্ধন হয়। ভোগের রান্না ঘরে ওঠার পর চরণামৃত খেয়ে উপবাস ভাঙেন রন্ধনশিল্পী।

বৈশাখ মাসে শ্রী ধামেশ্বর মন্দিরে মহাপ্রভুকে শীতলি ও পাকালি ভোগ নিবেদন করা হয়। এই ভোগ রান্নায় দধির ব্যবহার করা হয়। বিকেল পাঁচটায় ছানা,ফল, মিষ্টিতে ফের ভোগ দেওয়া হয় প্রভুকে। রাতে ভোগ দানের পর শয়ন আরতি।

প্রতি এক বছর অন্তর অঙ্গরাগ করা হয় মহাপ্রভুর। সেই সময় পনেরো দিনের জন্য মন্দির বন্ধ থাকে। ২০২২ সালের পৌষে অঙ্গরাগ সমাপন হয়েছে।

পয়লা পৌষ বিশেষ ভোগ আরতির পরে বিগ্রহ তুলে দেওয়া হয় শিল্পীর হাতে। তিনি নতুন ক্ষুর দিয়ে বিগ্রহে আঁচড় কেটে নিজে হাতে তাঁকে গ্রহণ করেন। পনেরো দিন পর বিগ্রহে রূপদান শেষ হলে পৌষের ষোলো তারিখ রাতে নির্দিষ্ট সময়ে সেবাইতরা শিল্পীকে বলেন, “আমাদের গৌর আমাদের ফিরিয়ে দাও।” নবরূপে সজ্জিত বিগ্রহ ফিরিয়ে দেন শিল্পী। পরের দিন অভিষেকের পরে ফের বিগ্রহের দর্শন পাওয়া যায়। চক্ষুদান অঙ্গরাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। শ্রী ধামেশ্বর মহাপ্রভুর অঙ্গসেবার ভার বংশ পরম্পরায় চক্রবর্তী পরিবারের।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...