উজ্জয়িনীর এই মন্দির নাকি স্বয়ং ব্রহ্মার তৈরি

শিপ্রা নদীর তীরে অবস্থিত উজ্জয়িনী শহরের প্রাণকেন্দ্র মহাকালেশ্বর মন্দির। এই মন্দির কবে তৈরি হয়েছে কেউ জানে না। কিন্তু নানা পুরাণ কথা আর কাহিনিতে মন্দির নিয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক মিথ। কথিত আছে রাজা বিক্রমাদিত্যের পর আর কোনও রাজা এখানে রাত অতিবাহিত করতে পারেননি। মহাকালেশ্বর মন্দিরকে পৃথিবীর নাভিস্থান বলা হয় কারণ এই মন্দিরের শিখর দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করে।

প্রাচীনকালে উজ্জয়িনীর নাম ছিল অবন্তিকা।ইতিহাসের বিখ্যাত নগরী। নানা জনপদ থেকে শিক্ষার্থী আসত এখানে পাঠ গ্রহণ করতে। 

মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী শহরের মহাকালেশ্বর মন্দিরকে দেশের অন্যতম পবিত্র মন্দির বলে গণ্য করা হয়। এখানে পূজিত হন মহাকাল। শিবের অনেক রূপের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপ মহাকাল। পুরাণ অনুযায়ী, এই রূপে শিব সময় ও মৃত্যুর দেবতা।   

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এই মন্দিরের শিবলিঙ্গটিকে স্বয়ম্ভ‌ু বা শিবের সাক্ষাৎ মূর্তি মনে করা হয়। মহাকালেশ্বরের মূর্তিটি দক্ষিণামূর্তি নামেও পরিচিত। ‘দক্ষিণামূর্তি’ শব্দের অর্থ ‘যাঁর মুখ দক্ষিণ দিকে’।

তান্ত্রিক শিবনেত্র প্রথা দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একমাত্র মহাকালেশ্বর মন্দিরেই দেখা যায়। ‘ওঙ্কারেশ্বর মহাদেবে’র মূর্তিটি মহাকাল মন্দিরের গর্ভগৃহের উপরে স্থাপিত। গর্ভগৃহের পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিকে যথাক্রমে গণেশ, পার্বতী ও কার্তিকের মূর্তি স্থাপিত। দক্ষিণ দিকে শিবের বাহন নন্দীর মূর্তি স্থাপিত। মন্দিরের তিনতলায় নাগচন্দ্রেশ্বরের মূর্তি আছে। এটি একমাত্র নাগপঞ্চমীর দিন দেখার জন্য খুলে দেওয়া হয়। মন্দিরটি পাঁচতলা। তার মধ্যে একটি ভূগর্ভে অবস্থিত।

মহাকালেশ্বর মন্দির কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার কোনও ঐতিহাসিক সাক্ষ্য নেই। পুরাণমতে, প্রজাপিতা ব্রহ্মা এই মন্দির তৈরি করেছিলেন।

মন্দিরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে রাজা চণ্ডপ্রদ্যোত কুমারসেন নামে এক রাজপুত্রকে এই মন্দিরে নিয়োগ করেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। মন্দিরের বর্তমান পাঁচতলা কাঠামো ১৭৩৪ সালে মরাঠা সেনাপতি রণোজি শিন্ডে তৈরি করেছিলেন মনে করা হয়।  

মহাকাল মন্দিরের অন্যতম আকর্ষণ ‘ভস্ম আরতি’। অনেক পুণ্যার্থী কেবল এই আরতি দেখার জন্যই অনেক দূর থেকে এই মন্দিরে আসেন। প্রতিদিন ভোর ৪টেয় আরতি শুরু হয়। ভস্ম আরতির আগে শিবলিঙ্গে দই, মধু, চন্দন মাখানো হয় এবং পরে দুধ-জল ঢেলে স্নান করানো হয়। আরতির সময় গর্ভগৃহে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...