কালী কথা: হাওড়া কালীবাবুর বাজারের সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির

কালিকা বঙ্গদেশে চ, কালভয়ভঞ্জিনী দেবী কালিকাই বঙ্গের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সেই কালীকে নিয়ে কালীকথা। আজকের কালীকথায় হাওড়া জেলার এক কালীর কথা। তিনি মা সিদ্ধেশ্বরী, আদতে দেবী হলেন বামাকালী। হাওড়ার শহরাঞ্চলে অবস্থিত অন্যতম প্রাচীন কালী মন্দির হল কালীবাবুর বাজার নিকটস্থ সিদ্ধেশ্বরী তলার সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির। মায়ের নামেই থান বা এলাকার নাম সিদ্ধেশ্বরী তলা। কালীবাবুর বাজারে পুজোয় বয়স প্রায় তিনশো বছরের বেশি। সে সময় মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি পূজিত হত। অধুনা কষ্টি পাথরের মূর্তি পূজিত হয়। কষ্টি পাথরের তৈরি দেবী কালিকার মূর্তিটি ও মন্দিরটির বর্তমান কাঠামোর বয়স আনুমানিক একশো বছর।

তবে কবে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তা আর নির্দিষ্ট করে জানা যায় না। তবে কথিত আছে, মায়ের স্বপ্নাদেশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। একদা মন্দিরের নিকটেই বইত হুগলি নদী। তখন বহু মানুষ নৌকা করে, যাওয়ার সময় নৌকা থামিয়ে মায়ের মন্দিরে পুজো দিয়ে যেত। তিনশো-সাড়ে তিনশো বছর আগে এই অঞ্চল ছিল ঘন-জঙ্গলে ভরা। পাশ দিয়ে বয়ে যেত গঙ্গা। সে'সময় এক তন্ত্রসাধক সন্ন্যাসী পর্ণকুটির বানিয়ে দেবীমূর্তি স্থাপন করে মায়ের আরাধনা করতেন। সেই থেকে মা সিদ্ধেশ্বরী কালীর পুজো হয়ে চলেছে। গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার এখন মন্দিরের সেবায়েত রূপে দায়িত্ব পালন করে। রানী বিরাজমোহিনী দেবীর থেকে তাঁরা এই মন্দিরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তারপর থেকে বংশানুক্রমিকভাবে চলে আসছে এই পুজো। হাওড়া স্টেশন থেকে রামরাজাতলাগামী বাসে কালীবাবুর বাজারে নামলে, সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের দেখা মেলে। মন্দিরের ঠিকানা ৫২ নম্বর নেতাজি সুভাষ রোড।

IMG-20240112-WA0025

একতলা মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্দির, তারপর গর্ভগৃহ। সেখানে বিরাজ করেন কষ্টিপাথরের ত্রিনয়নী মা কালী। সোনারুপোর গয়নায় ভূষিতা মা। রুপোর খাঁড়া থাকে তাঁর বাঁ হাতে।

কাশীর এক ভাস্কর মায়ের বিগ্রহ গড়েছিলেন। মূর্তির উচ্চতা পাঁচ ফুট। ১৯২০ সালের ১৬ আশ্বিন মন্দিরে প্রস্তর মূর্তি স্থাপন করা হয়।

ভক্ত ও স্থানীয় মানুষের কাছে সিদ্ধেশ্বরী মা জাগ্রত দেবী হিসেবেই পরিচিত। মায়ের কাছে কেউ কোনও আবদার করলে, মা কাউকেই খালি হাতে ফেরায় না বলে বিশ্বাস ভক্তদের। শোনা যায়, ভূকৈলাশের রাজার পুত্র একদা মারণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিল। পুত্রের সুস্থতার কামনায় রাজা হুগলি নদীর জলপথ ধরে বেনারসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। হঠাৎই তিনি স্বপ্নাদেশ পান সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিলে তাঁর পুত্র সন্তান সমস্ত ব্যাধি থেকে মুক্তি পাবে। নৌকা থামিয়ে তিনি সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পুজো দেন। তারপর তাঁর পুত্রও মারণব্যাধি থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে। এমনই নানান কাহিনী জড়িয়ে রয়েছে এই মন্দির ঘিরে।

মন্দিরে মহাসমারোহে কালী পুজো হয়। এক সময় ছাগ বলি হলেও, প্রাণী হত্যা এখন বন্ধ। তবে চালকুমড়ো ও আখ বলি দেওয়া হয় মায়ের মন্দিরে। প্রতিদিন অন্নভোগ হয়। মাকে আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। বছরের প্রতিটি দিন দেবীকে ভোগে মাছ নিবেদন করা হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...