কালী কথা: নাজমুল দারোগার বয়রা কালী

বঙ্গের দেবী কালী, দক্ষিণ বঙ্গের মতোই উত্তরেও তাঁর একাধিক মন্দির রয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ শহরে রয়েছে বয়রা কালীবাড়ির। এই মন্দিরের কালীপুজো বয়সে বেশ প্রাচীন। জনশ্রুতি রয়েছে, প্রবীণ এক সাধক বয়রা গাছের নীচে প্রথম কালীপুজোর প্রচলন করেন। শোনা যায়, এখানে দুটি নদী ছিল রুহিতর এবং অপরটি শ্রীমতি। দুটি নদীর মাধ্যমে বাণিজ্য চলত। বড় বড় নৌকা করে দূর দূরান্ত থেকে অনেক বণিক বাণিজ্য করতে আসতেন। নদী দুটিই এখন মজে গিয়েছে। সে'সময় বণিকরা এসে বিশ্রাম করতেন জঙ্গলাকীর্ণ এক জায়গায়। জায়গার নাম গুদরি বাজার। সেখানে এক ছোট্ট ঘরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় গড়ে ওঠে দেবীর মন্দির। দেবীর অলৌকিক ক্ষমতার কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। মন্দিরে পুজো পান দেবীর অষ্টধাতুর মূর্তিতে, একদা এখানে ডাকাতরাও দেবীর আরাধনা করেছে। কালীপুজোর দিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় মন্দির প্রাঙ্গণে।

শাস্ত্রমতে দেবী পূজিতা হন। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন। পুজো দেন মায়ের কাছে, মানত করেন। পুজো দিলেই পূর্ণ হয় মনস্কামনা, ভক্তরা বলেন কাউকে ফেরান না বয়রা কালী। উত্তরবঙ্গের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কালীপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম কালিয়াগঞ্জের বয়রা কালীবাড়ির পুজো। ১৯৯৮ সালে ভক্তদের চাঁদায় তৈরি করা হয় মায়ের মন্দিরে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত অষ্টধাতু দিয়ে গড়া মূর্তি।

বয়রা গাছের নীচে মন্দির বলেই মা এখানে বয়রা কালী নামে পরিচিত। প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে অধিষ্ঠিত মা কালী। মন্দিরের পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ব্রিটিশ আমলে, ১৯৩২ সালে ওই এলাকায় দারোগা হয়ে আসেন খন্দকার নাজমুল হক। শোনা যায়, ডাকাত দমনের জন্য তিনিও নাকি শরণাপন্ন হন মা কালীর। পরে তিনিই চাঁদা তুলে, অর্থ সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠা করেন মন্দির। 

তবে মন্দির ঘিরে তিনটি জনশ্রুতি রয়েছে, কথিত আছে, কয়েকশো বছর আগে বণিকরা নদীতীরের জঙ্গলের মধ্যে বয়রা গাছের নীচে কালীর পুজো প্রচলন করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, এই কালীপুজো শুরু হয়েছিল ডাকাতদের হাতে। বয়রা গাছের নীচে পুজো শুরু বলে নাম বয়রা কালী। আরেকটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, এক বধির ভক্ত এই মন্দিরের মা কালীর কাছে মানত করার পর নাকি শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়েছিল। সেই থেকে নাম হয় বয়রা কালী।

কালীর থান দীর্ঘদিন পড়েছিল অযত্নে। ১৯৩২ সালে কালিয়াগঞ্জের দারোগা হয়ে আসেন খন্দকার নাজমুল হক। দারোগা দেবী কালীর স্বপ্নাদেশ পান। তাঁরই প্রচেষ্টায় তৈরি হয় মন্দির। ভক্তদের কাছে আজ দেবী বয়রা কালী পরম জাগ্রত। শোনা যায়, কালীপুজোর রাতে শহরে বেড়াতে বের হতেন তিনি। অনেকেই দেবীর নূপুরের শব্দ শুনেছে। প্রচুর মানুষ প্রতিদিন এখানে পুজো দিতে আসেন। ভক্তি আর নিষ্ঠা ভরে এখানে পূজিতা হন বয়রা কালী।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...