কালী কথা: ময়দানপুর কালীবাড়ি, যেখানে একই সঙ্গে পূজিতা হন রক্ষাকালী ও দক্ষিণাকালী

আজ কালীকথায় উঠে আসবে নদীয়ার এক জাগ্রত কালী মন্দিরের কথা। মন্দিরের বয়স প্রায় তিনশো বছর, কেউ কেউ বলেন অষ্টাদশ শতকে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। গবেষকদের মতে, মন্দিরের বয়স ৩০৩ বছর। নদীয়ার ভীমপুরে রয়েছে মন্দিরটি। স্থানীয়দের কাছে মন্দিরটি ময়দানপুর কালীবাড়ি হিসেবেই পরিচিত।

c8d9b616-2d6a-43a3-b9fe-e6eee3d22afe

ভক্তদের বিশ্বাস, এই মন্দিরে এলে যাবতীয় মনস্কামনা পূরণ হয়। আর এই বিশ্বাস থেকেই ভক্তরা ভিড় করেন মন্দিরে। মন্দিরের মহিমা বা মাহাত্ম্য সবই ভক্তদের মুখে মুখে প্রচারিত হয়। মাহাত্ম্যের কথা এখন আর কেবল এলাকাবাসীর মধ্যে আটকে নেই, দূর-দূরান্তের ভক্তরাও এই মন্দিরে আসেন। মন্দিরের রীতি, মন্দিরে এসে মনবাসনা জানিয়ে মানত করতে হয়। পূরণ হলেই দেবীর পুজো দিতে হয়। পুজো দিতে অসংখ্য ভক্ত আসেন মন্দিরে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার মন্দিরে বিপুল সংখ্যায় ভক্ত সমাগম হয়। কালীপুজোর দিনগুলোতে মন্দির সংলগ্ন এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বিপুলসংখ্যক ভক্ত এখানে ভিড় জমান। করিবর্গার ছাদ আর বিরাট বিরাট থামের পিলার, গথিক স্থাপত্যের সাক্ষ্য বহন করে। মন্দিরে ফেলে আসা সময়ের ছাপ স্পষ্ট। মন্দিরের গর্ভ গৃহে বিরাজ করেন দেবী কালী। তবে একজন নন, এখানে দেখা মেলে জোড়া কালীর। একই মন্দিরে পাশাপাশি অবস্থান করেন রক্ষাকালী ও দক্ষিণাকালী। তাঁরা দুই জনই বসে থাকেন দেবাদিদেব শিবের ওপর।

মন্দির প্রতিষ্ঠার কাহিনী নিয়েও রয়েছে, নানান জনশ্রুতি, কথিত রয়েছে নানা অলৌকিক ঘটনা। কথিত রয়েছে, ময়দানপুরের এক বাসিন্দা জনৈকা লক্ষ্মী দাস দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। দেবী তাঁকে স্বপ্নে জানিয়েছিলেন, তাঁর বাড়ির কাছে মনসা গাছ রয়েছে। সেই গাছের মাটির তলায় তাঁরা আছেন। তাঁদের মাটি থেকে তুলে পুজো করতে হবে। পরদিন থেকেই পুজো করার নির্দেশ দিয়েছিলেন দেবী। দেবীর স্বপ্নাদেশের পরদিন ছিল শ্যামাপুজো।

শোনা যায়, লক্ষ্মী দাস ঘুম থেকে উঠেই বাড়ির সবাইকে স্বপ্নাদেশের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর কথা কেউ বিশ্বাস করেননি। যদিও শেষ পর্যন্ত মাটি খোঁড়া আরম্ভ হয়। বেশ কিছুটা মাটি খনন করার পর জোড়া কালীমূর্তি উদ্ধার করা হয়। এরপর ওই মনসা গাছের পাশেই দেবীর বেদী গড়ে তোলা হয়। খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে। কোনও পুরোহিত নয়, লক্ষ্মী দাস নিজেই পুজো শুরু করেন। প্রথমে পথটা সহজ ছিল না, অনেক প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়। গ্রামের অনেকেই লক্ষ্মী দাসের পুজো করার বিষয়টা মেনে নিতে পারেননি। পুজোর পর সেই সময় প্রতিমার বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল।

কালে কালে ওই বেদীর জায়গাতেই তৈরি হয় স্থায়ী মন্দির। দেবীর স্বপ্নাদেশেই ওই বেদীর স্থানে নির্মাণ করা হয় মন্দির। পঞ্চম দোল তিথিতে স্থায়ীভাবে দেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে, পুজো শুরু হয়। আজ থেকে প্রায় তিনশো বছর আগের ঘটনা। আজও মন্দিরে নিত্য পুজো হয়। দেবী কালিকার নিত্য ভোগ হয় মন্দিরে। আজও লক্ষ্মী দাসের পরিবারের লোকজন বংশপরম্পরায় ময়দানপুর কালীবাড়ির দেবী কালিকার পুজো করে চলেছেন। মন্দিরের জোড়া কালী প্রতিমার পাশেই রয়েছে দেবী লক্ষ্মীর বিগ্রহ। দেবী লক্ষ্মীও এখানে নিত্য পূজিতা হন।

  • ট্যাগ

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...