আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা: মোহরকুঞ্জ থেকে সেন্ট্রাল পার্ক, সাড়ে চার দশকের গর্বের সফর

কলকাতা বইমেলা নিজেই নিজের প্রতিযোগী। এক বছরের নজির পরের বছর সে নিজেই ভেঙে, নয়া নজির গড়ে। ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলাও এবার একের পর এক রেকর্ড গড়তে চলেছে। মাত্র ৩৬টি স্টল নিয়ে কলকাতা বইমেলার পথ চলা শুরু হয়েছিল। আজ তা মহিরূহ। এবারের বইমেলায় স্টলের সংখ্যা ছুঁয়েছে এক হাজার। যা সর্বকালীন রেকর্ড। গতবার প্রায় ৯০০ স্টল ছিল, এবার ছোট, বড় ও মাঝারি মিলিয়ে স্টলের সংখ্যা এক হাজার। পাশাপাশি এবারের আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হতে চলেছে প্রায় ১০ হাজার নতুন বই! এটিও অনন্য নজির।

বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেমন ছিল একেবারে শুরুর দিনগুলো। কীভাবে আরম্ভ হয়েছিল কলকাতা বইমেলা?

IMG-20240119-WA0048

সময়টা ১৯৭৪, পড়ন্ত দুপুরে কফি হাউসে আড্ডায় মশগুল কয়েকজন তরুণ-সাহিত্যপ্রেমী, লেখক ও প্রকাশক। বাঙালি প্রকাশনার পরিসর বাড়ানোর আলোচনা আরম্ভ হয়। উঠে আসে বইমেলার ভাবনা। তার আগে ১৯৭৫ সালে তৈরি হয় ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড’। গিল্ডের প্রথম সভাপতি হন সুশীল মুখোপাধ্যায়। ১৯৭৬ সালের ৫ মার্চ শুরু হয় প্রথম কলকাতা বইমেলা। রবীন্দ্রসদনের পাশে মোহরকুঞ্জে শুরু হয়েছিল বইমেলা। মেলা চলেছিল ১৪ মার্চ অবধি। তখনও আন্তর্জাতিক তকমা ছিল না কলকাতা বইমেলার। ১৯৮৩ সালে কলকাতার বইমেলার মুকুটের সঙ্গে যুক্ত হয় ‘আন্তর্জাতিক’ তকমা। ১৯৮৮ সালে বইমেলা উঠে আসে ময়দানে। ১৯৯১ সালে প্রথম ফোকাল থিমের রেওয়াজ চালু হয় কলকাতা বইমেলায়। প্রথম থিম হয়েছিল ‘অসম’। ১৯৯৪ সালে প্রথমবার হয় ‘থিমকান্ট্রি’, প্রথম ‘থিমকান্ট্রি’ ছিল জিম্বাবয়ে।

IMG-20230130-WA0006

১৯৯৭-র বইমেলা। মেলার ষষ্ঠ দিন, মেলায় ঘটে গেল ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড। লক্ষ লক্ষ বই পুড়ে যায়। কিন্তু মেলাকে দমানো যায়নি। তিন দিন পর ফের সেজে ওঠে মেলা। এরপর মেলার উপর নেমে আসে পরিবেশপ্রেমীদের খাড়া। পরিবেশপ্রেমীদের দাবি ছিল, বইমেলার দরুন কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ময়দান দূষিত হচ্ছে। মামলা হয়। ২০০৭ সালে পরিবেশপ্রেমীদের আন্দোলনের জেরে ময়দানের থেকে সরে যায় বইমেলা। বইমেলা চলে আসে কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দানে। কিন্তু সেখানে বইমেলাকে দাঁড় করানো যায়নি। বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়া সল্টলেক যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণকে।মেলা জৌলুস হারায়। মেলা থেকে মুখ ফেরান প্রকাশকরা। তারপর ২০০৯ সাল থেকে বইমেলার ঠিকানা হয় সায়েন্স সিটি লাগোয়া মিলনমেলা প্রাঙ্গণ। ২০১৮ সাল থেকে মেলা চলে আসে সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কে। ২০২২ সালে সেন্ট্রাল পার্কের নাম হয় বইমেলা প্রাঙ্গণ। সাড়ে চার দশক পর স্থায়ী ঠিকানা পায় বইমেলা। বইপ্রেমী থেকে শুরু করে পাঠক, সকলেই সেন্ট্রাল পার্কের বইমেলাকে সানন্দে গ্রহণ করেছে। ৪৬ তম কলকাতা বইমেলায় প্রায় পঁচিশ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। কুড়ি-পঁচিশ লক্ষের বেশি মানুষের পা পড়েছে। যা বইমেলার সর্বকালীন রেকর্ড। এবারে হয়ত সেই নজির ভেঙে নয়া রেকর্ড গড়বে কলকাতা বইমেলা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...