কালী কথা: কৃষ্ণনগর দুর্গাবাড়িতে সপ্তমীর রাতে চলে কালী আরাধনা

মাতৃশক্তির রূপ হলেন দেবী দুর্গা, দেবী কালিকাও তাই। মঙ্গলকোটের সালন্দার রায় বাড়িতে কালীই দেবী দুর্গা রূপে পূজিতা হন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে কালীকে দুর্গা রূপে পুজো করতে শুরু করেন রায় পরিবার। গত দশ পুরুষ ধরে কালী দুর্গা রূপে পূজিতা হচ্ছেন এই বাড়িতে। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে ৪০০ বছর ধরে চলে আসছে ঐতিহ্যবাহী অর্ধকালী পুজো। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুভাষগ্রামেও এমনই এক দেবী পূজিতা হন। দেবী দুর্গা ও দেবী কালিকা হলেন শক্তির দুই রূপ। মায়ের এই দুই রূপই একত্রে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুভাষগ্রামের দুর্গাবাড়িতে পূজিতা হয়ে আসছেন। ১৫৯ বছরের প্রাচীন পুজোতে দেবী অর্ধ কালী ও অর্ধ দুর্গারূপে পুজো পান। এই পুজোটি ওপার বাংলা থেকে শুরু হয়েছিল। এ তো গেল দুর্গার দেহে কালী আরাধনার কাহিনি বা কালীকে দুর্গা রূপে পুজো করার গল্প।

কিন্তু জানেন কি বেশ কয়েকটি বনেদি বাড়িতে দুর্গাপুজো চালাকালীন কালী পুজো হয়? সপ্তমী নয়ত অষ্টমীর রাতে চলে দেবী কালিকার আরাধনা।

নাকতলার চৌধুরী পরিবার অষ্টমীর রাতে কালী পুজো করে। আদপে এরা ঢাকা বিক্রমপুরের কুশারীপাড়ার পণ্ডিতবাড়ির সদস্য। আজ থেকে দুশো বছর আগে এই পুজো শুরু হয়েছিল ওপার বাংলায়। এদের বাড়ির দুর্গাপুজোয় অষ্টমীর দিন মা কালীর আরাধনা করা হয়। পাঁঠাবলি, আরতি, ভোগ বিতরণ সবই চলে। পরের দিন অর্থাৎ নবমীতে কালীর বিসর্জন হয়। দুর্গাপুজোর মাঝে মা কালীর আরাধনা চৌধুরিবাড়ির পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট। দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে এপার বাংলায় এসেছে গোটা পরিবার। তাঁরা নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছেন। আজও রীতি মানা হচ্ছে। অষ্টমী তিথি পড়ে যাওয়ার পরই কালী পুজো শুরু হয়। পাঁঠাবলিও হয়।

জলপাইগুড়ির নিয়োগী বাড়িতেও অষ্টমীর দিন পুজো পুজো হয়। তাঁদের পুজোও শুরু হয়েছিল ওপার বাংলা থেকে। পুজোর বয়স দুশো বছর।

কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগর দুর্গাবাড়িতে আবার সপ্তমীর রাতে কালীপুজো হয়। আজও প্রথা মেনে ফি বছর এই পুজো হয়। সপ্তমীর রাতেই পুজো করে পরদিন সকালে অষ্টমীর পুজো শুরু হওয়ার আগেই কালী প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়া হয়। এখানকার মণ্ডপের দেওয়াল মাত্র তিন ইঞ্চির, বিশেষ পদ্ধতিতে মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। তিন ইঞ্চির মণ্ডপ হলেও তা বেশ মজবুত। একে তিন ইঞ্চি দুর্গাবাড়িও বলা হয়।

কালী দুর্গারই আরেকটি রূপ। অষ্টমী তিথিতে মহাশক্তিতে, মহামায়া রূপে অসুর নিধনে ব্রতী হয়েছিলেন দেবী দুর্গা। তাই সেই মহামায়ার আরাধনায় সপ্তমীর রাতে অর্থাৎ অষ্টমী তিথির প্রারম্ভে কালীপুজো করা হয়।

ওপার বাংলার গোয়ালন্দের ফরিদপুরের উজানচর গ্রামে দুর্গাবাড়ির দাস পরিবারের পুজোর সূচনা হয়েছিল ১৭৭৪ সালে। শোনা যায়, দাস বংশের পঞ্চম পুরুষ গঙ্গারাম দাস আগমনী গান গাইতেন জায়গায় জায়গায় গিয়ে। গানই ছিল তাঁর পেশা। একবার এক জমিদার বাড়িতে আগমনী গান করার আমন্ত্রণ পান তিনি। পরিবার ছেড়ে থাকার বাইরে থাকার কারণে, একদিন মনের দুঃখে নৌকায় বসে আগমনী গান গাইছিলেন তিনি। হঠাৎই লাল শাড়ি পরা মা দুর্গার দর্শন পান। আগমনী গান শুনে মা দুর্গা খুশি হয়ে তাকে দুর্গাপুজো করার আদেশ দেন। দেশভাগের পর ১৯৫২ সালে বিজয়কুমার দাসের আমলে কৃষ্ণনগরের দুর্গাবাড়িতে পুজো শুরু হয়। অর্থাৎ দাস পরিবার আড়াইশো বছর ধরে দুর্গাপুজো করছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...