কালী কথা: ভাটপাড়ার জগত্তারিণী কালী, দেবী পূজিতা হন বৈষ্ণব মতে

আজ বাংলা ভাটপাড়াকে অন্যভাবে জানলেও ভাটপাড়া ছিল বাংলার শিক্ষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য পীঠস্থান। অজস্র টোল ছিল ভাটপাড়ায়। সেরা পণ্ডিতদের তদানিন্তন সময়ে ‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধিতে ভূষিত করা হতো। উনিশ শতকের শেষ ভাগে গোটা ভারতে ১৯ জন ‘মহামহোপাধ্যায়’ জীবিত ছিলেন, পাঁচ জনই ভাটপাড়ার। ভাটপাড়া মানেই টুলো পণ্ডিতদের আখড়া। সে ইতিহাস বলতে গেলে আস্ত কয়েকখানা বইয়ের সামিল হবে। গঙ্গাতীরের প্রাচীন জনপদ ভাটপাড়ায় বিরাজ করেন মা জগৎত্তারিণী। মন্দিরের বয়স পঞ্চাশ বছরেরও বেশি। মন্দিরটি জগত্তারিণী কালী মন্দির হলেও আম জনতার কাছে মন্দিরটি ‘ভাটপাড়া কালী মন্দির’ নামেই অধিক জনপ্রিয়।

মন্দিরটি একচূড়া বিশিষ্ট। বিশাল নাট মন্দিরের মধ্যে দিয়ে সোজা গেলে মায়ের মন্দির। কয়েকধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে মায়ের গর্ভগৃহ। সেখানে বিরাজ করেন দেবী। তাঁর মূর্তি প্রস্তর নির্মিত। দেবীর গাত্রবর্ণ অমবস্যার রাতের ন্যায় কালো। চতুর্ভজা তিনি। নরমুণ্ড, খর্গ ধারণ করার পাশাপাশি তিনি বরাভয় এবং আশীর্বাদও দেন। শিব থাকেন পদতলে। রাজরাজেশ্বরী বেশে দেবীকে পুজো করা হয়। মায়ের গর্ভগৃহের পাশের দেবীর ভৈরব পুজো পান। মায়ের মন্দিরের প্রবেশপথের বাঁদিকে রয়েছে রাধা কৃষ্ণের ঘর। সেখানে রাধা কৃষ্ণের যুগল বিগ্রহ রয়েছে। পাশেই অবস্থান করেন জগন্নাথ, বলভদ্রদেব, সুভদ্রা। 

bhatpara-kali

 

পতিত বা নিষ্কর জমিতে মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে, জানবাজরের রানী রাসমণি নাকি একবার এই জমি পছন্দ করেছিলেন মন্দির গড়বেন বলে। যদিও শেষ অবধি মন্দির গড়া হয়ে ওঠেনি।

রানী রাসমণি হালিশহরের মেয়ে, ফলে তাঁর এ তল্লাটে মন্দির গড়তে চাওয়া সম্ভব। এর বহুকাল পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে ১৯৬৯-১৯৭০ সাল নাগাদ গড়ে ওঠে। জৈষ্ঠ্য মাসের সংক্রান্তির দিন মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। মন্দির ঘিরে নানান অলৌকিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে।

দেবীর নিত্যপুজো হয়। দেবীর পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। এখানে পশু বলি হয় না। অনুকল্প হিসাবে চালকুমড়ো, আখ, কলা ইত্যাদি বলি দেওয়া হয়। অন্যান্য কালী মন্দিরের মতো এখানেও প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বিশেষ পুজো হয়। ভিড় উপচে পড়ে। ফি বছর ২৬ জানুয়ারি মায়ের অন্নকূট উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ফলহারিণী কালীপুজো, রটন্তী কালীপুজো, কৌশিকী অমাবস্যা, দীপান্বিতা কালীপুজো আয়োজিত হয় ধুমধাম করে। জগত্তারিণী পীঠ ট্রাস্ট মন্দিরের দেখভাল করে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...