কালী কথা: গুসকরা রটন্তী কালীর মন্দির

আজকের কালীকথায় বর্ধমানের বর্ধিষ্ণু গ্রাম গুসকরার কথা, সেখানে রয়েছে রটন্তী কালী মন্দির। গুসকরা কলেজের অদূরেই রয়েছে গুসকরা রটন্তী কালীর মন্দির। এককালে নদী বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে বাংলায় একাধিক জনপদ গড়ে উঠেছিল। গুসকরাও তেমনই একটি জনপদ।

শক্তিসাধনার ভূমি গুসকরা। গুসকরার উত্তরে রয়েছে অজয় নদের শাখানদী কুনুর, দক্ষিণে রয়েছে ঘুসকরা নদী। ঘুসকরা নদীর তীরে গড়ে ওঠা গ্রামই, কালে কালে নদীর নামের অপভ্রংশ হয়ে গুসকরা নামের জন্ম। ঘুসকরা নদী জলপথে বাণিজ্যর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কবিকঙ্কন মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে ঘুসকরা নদীর উল্লেখ পাওয়া যায়। অজয়ের শাখানদী, কুনুরের তীরে গুসকরা গ্রামে ছিল বহু প্রাচীন এক শ্মশান। সেই শ্মশানেই আজ থেকে তিনশ বছর আগে এক সিদ্ধতান্ত্রিক জনৈক রতনেশ্বর সাধনা করতেন। তিনি পঞ্চমুণ্ডির আসনে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন। আজও মন্দির প্রাঙ্গণে উত্তরদিকে সাধক রতনেশ্বরের সমাধি রয়েছে। মন্দিরের বয়স প্রায় তিনশো বছর।

d048b7e3-2a36-4093-8978-8edf4b923796

ব্যবসার কারণে, ঢাকার চট্টগ্রাম থেকে চোংদার পরিবার গুসকরায় বসতি গড়ে তোলে। সাধক রতনেশ্বরের মৃত্যুর পরে মন্দিরের দায়িত্ব নেয় চোংদার পরিবার। আজও গুসকরার রটন্তী কালী মন্দিরের দায়িত্ব পালন করে চলছে গুসকরার চোংদার পরিবার। এই কালীপুজো শুরু হওয়ার পিছনে আরও একটি কাহিনি রয়েছে। গুসকরার ঐতিহ্যবাহী পরিবার হল চোঙদার পরিবার, সেই চোঙদার পরিবারের নিজস্ব পুজো এটি। চোঙদার পরিবারের এক সদস্য তন্ত্রসাধক ছিলেন, তিনিই মাকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 

মন্দিরের গর্ভগৃহে পঞ্চমুণ্ডির আসনের ওপর উঁচু বেদিতে চতুর্ভুজা দেবী রটন্তী কালী শিবের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। প্রতিবছর মাঘ মাসের রটন্তী চতুর্দশীতে খড়-মাটি দিয়ে দেবীর বিগ্রহ নির্মাণ করা হয়। মন্দিরে পঞ্চমুণ্ডির আসনের উপর দেবীবিগ্রহ বিরাজ করে, দেবীবিগ্রহ সম্পূর্ণ খড়ের। কাপড়ে আবৃত থাকেন মা। মাতৃমূর্তির কেবল মাত্র মুখমণ্ডলটিই সারা বছর মাটির প্রলেপে দৃশ্যমান থাকে। বাকি অংশে মাটির প্রলেপ থাকে না। প্রতি বছর মাঘ মাসের রটন্তী চতুর্দশীতে মায়ের মূর্তি নতুন করে মাটির প্রলেপ দিয়ে তৈরি করা হয়। রটন্তী কালীপুজো থেকে শুরু করে সাত দিন ধরে দেবীর পুজো করা হয়। পুজোর পর দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হয় পাশের কুনু নদীতে। বিসর্জনের পর নদী থেকে কাঠামোটি তুলে এনে পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসিয়ে রাখা হয়। তখন মৃৎশিল্পী এসে দেবীর ও শিবের মুখমন্ডলটি তৈরি করে দিয়ে যান। দেবীর দেহের খড়ের কাঠামো সারা বছর কাপড়ে ঢাকা থাকে। রটন্তী কালীপুজো ছাড়াও মন্দিরে প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। দীপান্বিতা কালীপুজোয় জাঁকজমকপূর্ণভাবে কালীর আরাধনা করা হয়। সে'সময় দুশো থেকে আড়াইশো ছাগ বলি হয় মন্দিরে। মন্দিরে প্রতিদিনই অগণিত ভক্তের সমাগম হয়। তবে মন্দিরে নিত্যভোগের ব্যবস্থা নেই। মাঘ মাসের রটন্তী কালীপুজো উপলক্ষ্যে মেলা বসে।

রটন্তী কালী গোটা বর্ধমান জুড়ে অত্যন্ত জাগ্রত হিসেবে খ্যাত। মৃগীরোগীরা আরোগ্য লাভের আশায় 

এখানে পুজো দেন। সন্তানহীনা মায়েরা সন্তানের কামনায় মন্দিরে পুজো দেন। ভক্তদের বিশ্বাস মায়ের কৃপায় তাঁদের মনোস্কামনা পূর্ণ হয়। 

  • ট্যাগ

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...